‘বন্ধুর সঙ্গে স্কুটারে তেল ভরতে গিয়েছিলাম। মাস্ক বাড়িতে আছে। এটুকু সময়ের জন্য মাস্ক পরার আবার কী দরকার?’ স্কুটারচালক এক যুবক (বেকবাগান এলাকা)
লকডাউন শুরু হওয়ার পরে পরেই পুলিশের লাঠির ভয়ে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল শহরের বিভিন্ন এলাকা। কিন্তু এখন বিনা কারণে রাস্তায় বেরোনো সাধারণ মানুষের উপরে পুলিশ আর তেমন কড়াকড়ি করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ, তৃতীয় দফায় লকডাউন শুরু হওয়ার পরে গাড়ি তল্লাশিতে জোর দেওয়া হলেও মানুষকে আর জোর করে ঘরে ঢুকতে বাধ্য করা হচ্ছে না। ফলে পুলিশের এমন ‘নরম’ মনোভাবের কারণেই শহরের একাধিক জায়গায় লকডাউন বিধি শিকেয় তুলে বেআইনি জমায়েত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার থেকে তৃতীয় দফায় লকডাউন শুরু হতেই মদের দোকান-সহ বেশ কিছু অফিসকাছারি খোলা নিয়ে ছাড়পত্র দিয়েছে প্রশাসন। আর তার জেরেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন বিধি কার্যত শিকেয় উঠছে বলে অভিযোগ। তবে বড়বাজার, ভবানীপুর, রাজাবাজার, নারকেলডাঙা, কলুটোলা, বৈষ্ণবঘাটা-সহ যে সব এলাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োন রয়েছে, সেখানে অবশ্য পুলিশের নজর এড়িয়ে কেউ বিনা কারণে ঘরের বাইরে বার হতে পারছেন না বলে দাবি করছেন স্থানীয়েরা।
লালবাজার অবশ্য বলছে, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া যাঁরা রাস্তায় বেরোচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত গাড়ি ছাড়া সব গাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে। বাজারে ভিড় কমাতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়ায় আপাতত সেখানে ভিড় বেশ কিছুটা কমেছে বলে দাবি পুলিশকর্তাদের। তবে মানুষকে ঘরে রাখতে লাঠির বদলে এলাকায় মাইকিংয়ের নীতি নিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া প্রতিদিন আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে লালবাজার।
আরও পড়ুন: লকডাউনে সুযোগ বুঝে ফাঁদ পাতছে সাইবার প্রতারকেরা
নিয়ম না মানলে
• বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১(বি) ধারায় মামলা দায়ের, দু’বছরের জেল বা জরিমানা বা দুটোই হতে পারে
• প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় এক মাসের জেল বা জরিমানা বা দুটোই হতে পারে
• এ ছাড়া ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৬৯ এবং ২৭০ ধারায় মামলা করতে পারে পুলিশ
• ২৬৯ ধারা: মারণ রোগ ছড়ানোর ব্যাপারে অবহেলা বা গাফিলতিতে ছ’মাসের জেল বা জরিমানা বা দুটোই
• ২৭০ ধারায় মারণ রোগের সংক্রমণ ছড়ানোর অভিযোগে দু’বছরের জেল বা জরিমানা বা দুটোই
মামলা হয়েছে
• ২৪ মার্চ থেকে ৫ মে পর্যন্ত: ২৪৩৫৬টি
• প্রকাশ্যে থুতু ফেলার জন্য: ৫২৩টি
• মাস্ক না পরার জন্য: ২৫৯১টি
• সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য: ২১২৩৬টি
তবে শহরবাসীর একাংশের মতে, লকডাউনের শুরুর দিকে বিধি কার্যকর করতে বা সাধারণ মানুষকে বাড়ির ভিতরে থাকতে বাধ্য করানোয় পুলিশের যতটা উৎসাহ ছিল, তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। আর সে কারণেই ফের অলিগলিতে শুরু হয়েছে দেদার আড্ডা, বেআইনি জমায়েত। বিনা কারণে রাস্তায় বেরোনো ঠেকাতে পুলিশ টহল দিলেও তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। হরিদেবপুর, পর্ণশ্রী, যাদবপুর, তিলজলা, কাশীপুর-সহ একাধিক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, পুলিশ চলে গেলেই ফিরছে বেআইনি জমায়েত। লকডাউনের মধ্যে যে হেতু বিভিন্ন দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং মদের দোকানের ভিড় সামলানোর কাজ করতে হচ্ছে পুলিশকে, তাই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের গা-ছাড়া ভাব এসেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশের একটি অংশের মতে, প্রথম দিকে পুলিশ আইন মেনে লকডাউন কার্যকর করেছিল। সে সময়েই পোস্তা, জোড়াবাগানের ডালপট্টি পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী।
ওই বাজারে দূরত্ব-বিধি না মানায় পুলিশ বেশ কিছু কড়াকড়ি করেছিল সে সময়ে, যা নিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আপত্তি জানান। তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, কড়াকড়ি করা হবে না। এ ছাড়া, পরবর্তী কালে রাজ্যের অন্যত্র অবাধ্য জনতাকে ঘরে ঢোকাতে পুলিশ কড়াকড়ি করলেও মুখ্যমন্ত্রী তাদের সংযত হতে বলেন। তার পর থেকেই আইনভঙ্গকারীদের আর লাঠিপেটা করছে না পুলিশ। সেই সঙ্গে একাধিক পুলিশ আধিকারিক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তা মানসিক ভাবে বাহিনীকে কিছুটা পিছিয়ে দিচ্ছে এবং তাদের কাজে প্রভাব ফেলছে বলেও দাবি অনেকের। তবে লালবাজারের দাবি, কড়াকড়ির নামে লাঠির অপব্যবহার যাতে না হয়, তাই সংযত ভাবে সাধারণ মানুষকে বোঝানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাহিনীকে।
আরও পড়ুন: আতঙ্কে ‘হেনস্থা’ হাসপাতালের কর্মীদেরও
লালবাজার জানিয়েছে, লকডাউন বিধি মান্য না-করার কারণে এখনও পর্যন্ত ২৪৩৫৬ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তা ছাড়া প্রতিদিন সব জায়গায় পুলিশ বাহিনী টহল দিচ্ছে। পূর্ব, মধ্য এবং বন্দর এলাকা-সহ যে সব জায়গায় লকডাউন বিধি না-মানার অভিযোগ উঠছে, সেখানেও পুলিশ অলিগলিতে ঢুকে জনতাকে তাড়া করে বাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তবে তার জন্য লাঠি চালানোর অনুমতি নেই বলেই পুলিশের দাবি।
তথ্যসূত্র: কলকাতা পুলিশ
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)