বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দোসর বিক্ষোভ, বিপর্যস্ত মেট্রো

সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নোয়াপাড়া থেকে কবি সুভাষের মধ্যে ২৪টি স্টেশনে ট্রেন থমকে যাওয়ায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন যাত্রীরা। বিভিন্ন স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েন ট্রেনের ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৯ ০২:২৯
Share:

চাঁদনি চক স্টেশনে যাত্রীদের অপেক্ষা। সোমবার সন্ধ্যায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ভরসন্ধ্যায় শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং পরে তার জেরে সেন্ট্রাল স্টেশনে যাত্রীদের বিক্ষোভে সোমবার বিপর্যন্ত হল মেট্রো পরিষেবা। সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে প্রায় ১০টা পর্যন্ত থমকে থাকে পরিষেবা। এর পরে অবশ্য কয়েকটি ট্রেন চালানো হয়।

Advertisement

সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নোয়াপাড়া থেকে কবি সুভাষের মধ্যে ২৪টি স্টেশনে ট্রেন থমকে যাওয়ায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন যাত্রীরা। বিভিন্ন স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েন ট্রেনের ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীরাও। মেট্রো না পাওয়ায় রাজপথেও উপচে পড়ে বাড়িমুখো যাত্রীদের ভিড়। রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও এ দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য পরিবহণ নিগম কয়েকটি অতিরিক্ত বাস চালায়।

সমস্যার শুরু সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ, শোভাবাজার স্টেশনে। আচমকা থার্ড রেলে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় আটকে পড়ে কবি সুভাষমুখী এসি মেট্রোর একটি নতুন রেক। বেশ কিছু ক্ষণ চেষ্টার পরেও থার্ড রেলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে না পেরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ সেন্ট্রাল থেকে কবি সুভাষের মধ্যে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করেন। বিপত্তির জেরে তত ক্ষণে দমদমমুখী ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ে সেন্ট্রাল স্টেশনে দমদমমুখী একটি ট্রেন আটকে ছিল। সেটিকেই ওয়াই সাইডিং দিয়ে ঘুরিয়ে কবি সুভাষের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দমদমমুখী ট্রেনের যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ ট্রেন থেকে নামতে চাননি। প্রায় ৪০ মিনিট কেটে যাওয়ার পরে ট্রেনটিকে খালি করা সম্ভব হয়। ওই ট্রেনটিকে কোনও মতে কবি সুভাষের দিকে রওনা করানোর পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ যখন আংশিক ভাবে পরিষেবা স্বাভাবিক করার আশা দেখছেন, তখনই ফের গোলমাল শুরু হয়। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন দমদমমুখী যাত্রীরা। তাঁদের বিক্ষোভে কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেন্ট্রাল স্টেশনের কাজকর্ম শিকেয় ওঠে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের কোনও অনুরোধই এ দিন যাত্রীদের একাংশ কানে তোলেননি। বিক্ষোভের জেরে নোয়াপাড়া থেকে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল থমকে যায়।

Advertisement

পরিস্থিতি সামলাতে মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার পি সি শর্মা, চিফ অপারেশনস ম্যানেজার সাত্যকি নাথ-সহ একাধিক শীর্ষ কর্তা সেন্ট্রাল স্টেশনে ছুটে যান। কিন্তু তাঁদের অনুরোধেও কাজ হয়নি। যাত্রীরা স্টেশন আঁকড়ে পড়ে থাকায় সমস্যা আরও জটিল হয়।

বিদ্যুৎ বিপর্যয় দিয়ে যে সমস্যার শুরু, তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে যাত্রীদের একাংশের অসহযোগিতা এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তহীনতায়। যাত্রীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, মেট্রো কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন, তার কিছুই তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না। বিপত্তির সময়ে সেন্ট্রালে স্টেশন মাস্টারকে খুঁজে না পেয়েও ক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রীদের একাংশ। বিধান পাল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘মেট্রো কর্তৃপক্ষ কী করতে চলেছেন, তার কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। তাঁদের রীতিমতো ছন্নছাড়া দেখিয়েছে।’’ রাজশ্রী চক্রবর্তী মল্লিক এবং অনসূয়া মুখোপাধ্যায় নামে দুই যাত্রী জানান, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত তাঁদের ট্রেনের অপেক্ষায় আটকে থাকতে হয়।

বহু যাত্রীর আবার অভিযোগ, স্টেশনের প্রবেশপথের বোর্ডে পরিষেবা চালু থাকার বার্তা দেওয়া ছিল। কিন্তু কেন? মেট্রো কর্তৃপক্ষ এর কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

শোভাবাজারে ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির তৈরি নতুন এসি রেক কেন আটকে পড়ল, তা নিয়ে চিন্তায় মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য রেকটি আটকে পড়ে, না কি রেকের কারণেই বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে, তা জানার চেষ্টা চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement