প্রতীকী ছবি।
একাধিক পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করে গাড়ি ও মোটরবাইক চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পুলিশের আশা ছিল, উৎসবের মরসুমে কমবে পথ দুর্ঘটনা। কিন্তু দুর্গাপুজোর চার দিন তো বটেই, কালীপুজোতেও গাড়ি বা মোটরবাইক চালকদের পথের বিধি মানাতে হিমশিম খেতে হল পুলিশকে! উৎসবের এক মাসে মামলাও রুজু হল গত কয়েক মাসের তুলনায় বেশি। পথ দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক।
পুলিশের চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে দুর্ঘটনার ধরন। কোথাও বেপরোয়া গতির মোটরবাইক সরাসরি বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারায় থেঁতলে যায় বাইকচালকের নিজের মাথা। কোথাও আবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি ঢুকে পড়ে রাস্তার ধারের ঘরে কিংবা ধাক্কা মারে পথচারীদের। বেঘোরে মৃত্যু হয় মানুষের। শনিবারই বাঘা যতীনে বেপরোয়া গতির বাস পিষে দেয় বছর পঁচিশের স্কুটার চালককে। দেহ চাকার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বুঝেও বাস থামায়নি চালক। ওই দিন বিকেলেই আবার চিংড়িঘাটার মোড়ে রাস্তার ধারে ছয় পথচারীকে ধাক্কা মারেন গাড়ির মালিক। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এক যুবকের।
পুলিশ সূত্রের খবর, কালীপুজোর আগের দিন থেকে প্রতিমা বিসর্জনের শেষ দিন, রবিবার পর্যন্ত ১০টি বড় পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে শহরে। মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত এই সংখ্যাটা ছিল দ্বিগুণ। এ দিকে শীত পড়ে গিয়েছে। এই সময়ে রাত এবং ভোরের কুয়াশা অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে। পুলিশের একটি মহলের আশঙ্কা, পথ দুর্ঘটনার এই ধারাবাহিকতা আগামিদিনে বাড়বে না তো?
কিন্তু পর পর দুর্ঘটনা ঘটছে কেন? পুলিশের বড় অংশ এ জন্য উৎসবের মরসুমে সরকারি ছাড়কেই দায়ী করেছেন। পাশাপাশি পুলিশের দাবি, করোনার জন্য ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ দিয়ে পরীক্ষা আপাতত বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শহর জুড়ে মত্ত অবস্থায় গাড়ি বা মোটরবাইক চালানোর প্রবণতাও বেড়ে থাকতে পারে। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘নাকা তল্লাশিতে না বোঝা গেলে এই ধরনের চালকেরা বেরিয়ে যাচ্ছে।’’
মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর এই আতঙ্কই উঠে এসেছে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’র (এনসিআরবি) একটি রিপোর্টে। দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে কলকাতায় পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২০৬৮টি। সেখানে লকডাউনে যানবাহন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে শহরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৬৮৩টি। যার ৯৫৭টি ঘটনাই ঘটেছে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বা তীব্র গতির জেরে। ওই রিপোর্টে প্রকাশ, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার নিরিখে দেশের মধ্যে কলকাতা দ্বিতীয়। চেন্নাই রয়েছে প্রথম স্থানে। ২০২০ সালে শুধু মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়েই চেন্নাইয়ে ৭২৬টি এবং কলকাতায় ৩৪৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আরও একটি তথ্য পুলিশের চিন্তা বাড়াচ্ছে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় বেশির ভাগ পথ দুর্ঘটনার শিকার অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের লোকজন। সব চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৪৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। বিভিন্ন ঘটনায় রাত ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। আবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এ জন্য পারাপারের সময়ে সিগন্যালে কম সময় পাওয়া এবং মাঝরাস্তায় হঠাৎ করে গাড়ি বা বাস থেকে তাঁদের নেমে পড়ার চেষ্টাকেও দায়ী করা হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা যদিও বলছেন, ‘‘গত কয়েক বছরের লাগাতার সচেতনতামূলক পদক্ষেপের ফলাফল মিলছে। পথ দুর্ঘটনা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, পুজো শেষ। ফের রাতের কড়াকড়ি ফিরলেই দুর্ঘটনা অনেক কমবে।