প্রায়ই এ ভাবে ফোন কানে দেখা যায় অ্যাপ-ক্যাব চালকদের। সোমবার,ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
পরপর বুকিং ঢুকছে মোবাইলে। রাত গ়ড়িয়ে ভোর হতে চললেও বিরাম নেই চালকের। ভোরের দিকে ফাঁকা রাস্তায় যখন যাত্রী নিয়ে ছুটছেন তিনি, চোখ টেনে আসছে ঘুমে। রাতবিরেতে ক্যাব যাত্রীদের অনেকেই এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, বেশি আয়ের লোভে ক্যাব চালকদের অতিরিক্ত সময় ধরে গাড়ি চালানোয় কি যাত্রী-নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে না?
ওলার কলকাতা শাখার জেনারেল ম্যানেজার জাগৃত চৌধুরী বলেন, ‘‘চালকদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করার জন্য চাপ দেওয়া হয় না। বরং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, নিয়মিত চোখ পরীক্ষা, সিট বেল্ট ব্যবহার, বেলাগাম গতিতে গাড়ি না চালানো, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা না বলা— এগুলোর উপরে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু চালক অতিরিক্ত সময় ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন কি না, বা ক্লান্ত কি না, তার উপরে নজরদারি করার কোনও পদ্ধতি নেই।’’ উব্র-এর তরফে অবশ্য রাত পর্যন্ত কোনও বক্তব্য মেলেনি।
যাত্রীদের একাংশের দাবি, রাতের দিকে যে সব চালকেরা বেরোন, তাঁদের বেশির ভাগই ক্লান্ত থাকেন। এক যাত্রী বলেন, ‘‘এক জন চালকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছিলাম, সকালে তিনি একটি অফিসে ১২ ঘণ্টা ডিউটি করেন। রাতে অতিরিক্ত আয়ের লোভে ক্যাব চালান।’’ ক্যাব চালকদের অনেকে এ কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, শরীরে চাপ প়়ড়লেও রাতে আয় বেশি হয়। রবিবার ভোরে বাইপাসে গা়ড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় শিবপুর আইআইইএসটি-র ছাত্র সায়ন্তন বিশ্বাসের। সেই গাড়ির চালকও সোমবার জানিয়েছেন ক্লান্তিবশত তার ঘুম পেয়ে গিয়েছিল। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি।
ক্যাব চালকদের একাংশের দাবি, আগে নির্দিষ্ট সংখ্যক রাইডের উপরে মোটা কমিশন মিলত। পরের ধাপের কমিশনের জন্য আরও কিছু রাইডের প্রয়োজন হতো। ফলে বেশির ভাগ চালক প্রথম ধাপের কমিশনে খুশি হয়ে যেতেন। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি রাইডে যত ভাড়া হচ্ছে, তার উপরে কমিশন দেওয়া হয়। এই লোভেই চালকেরা ক্লান্ত হয়েও গাড়ি চালাচ্ছেন। সওয়ারিকে দ্রুত পৌঁছে দিলে পরের ভাড়া মিলবে, এই লোভেও কখনও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন চালকেরা।