ভিআইপি রোড

ব্যাঙ্কে নগদ ফুরিয়ে গেলেই ভরসার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে ‘বার’

এ যেন কোনও গৌরী সেনের শরণ। বেলা ১২টায় কাউন্টারের সর্পিল লাইন ব্যাঙ্কের গেট ছাড়িয়ে বাইরে বেঁকে যাচ্ছে দেখতে পেয়েই তটস্থ ম্যানেজার ফোন করলেন। ‘‘আপ কাঁহা হ্যায় অগ্রবালজি, তুরন্ত আইয়ে! আমাদের বাঁচান।’’

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১২
Share:

এ যেন কোনও গৌরী সেনের শরণ।

Advertisement

বেলা ১২টায় কাউন্টারের সর্পিল লাইন ব্যাঙ্কের গেট ছাড়িয়ে বাইরে বেঁকে যাচ্ছে দেখতে পেয়েই তটস্থ ম্যানেজার ফোন করলেন। ‘‘আপ কাঁহা হ্যায় অগ্রবালজি, তুরন্ত আইয়ে! আমাদের বাঁচান।’’

দিনান্তে যাঁর দেখা না-মিললে চোখে হারাচ্ছেন ব্যাঙ্ক-কর্তারা। না, তিনি ব্যাঙ্কের ‘কারেন্সি চেস্ট’-এর সম্পদ সামলানোর ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক নন। তবু এই ‘গৌরী সেন’ই এখন ব্যাঙ্কের কোষাগারের ‘লাইফলাইন’! ঈষৎ ভারী চেহারার সাফারি স্যুটধারী মাঝবয়সী পানের পিক ফেলে খলখলিয়ে হাসেন, ‘‘এক দিন টাকা জমা দিতে না-এলেই কাকুতি, মিনতি। আমাদের বাঁচান!’’

Advertisement

কে তিনি? রাজারহাটের চিনার পার্কের জনৈক পানশালা কর্তা। নোট-কাণ্ডের সৌজন্যে ব্যাঙ্কমহলে তিনি এখন ত্রাতার মর্যাদা পাচ্ছেন। তিনি অবশ্য একা নন, কলকাতার উপকণ্ঠে ভিআইপি রোড লাগোয়া বিস্তীর্ণ অংশের পানশালাগুলো কার্যত ব্যাঙ্কের অক্সিজেন। সন্ধে গড়াতেই ওই তল্লাটের পানশালায় সুরে-সুরায় আসর জমে ওঠে বরাবরই। ‘ক্রুনার’ বা গায়িকাদের মদির কণ্ঠের গান শুনে দেদার নগদ টাকাও খরচ করেন রেস্তদার রসিকেরা। এই নোট-কাণ্ডের ধাক্কাতেও তাঁরা পুরোপুরি দমে যাননি।

স্থানীয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার জোর গলায় বলছেন, ‘‘সিঙ্গিং বার এখন আমাদের লক্ষ্মী।’’ তেঘরিয়ার বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, হেড অফিসে কারেন্সি চেস্ট থেকে যা টাকা আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। শুধু ওইটুকুতে গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো মুশকিল। এই পরিস্থিতিতে বড় ভরসা স্থানীয় পানশালাগুলি। অনেক ব্যাঙ্ককর্তারই মত, ‘‘বারে গান শুনে ছুড়ে দেওয়া টাকা না-থাকলে গ্রাহকদের ক্ষোভ সামাল দিতে পুলিশ ডাকতে হতো।’’

তেঘরিয়ার নামী পানশালার ম্যানেজার বলেন, ‘‘আমাদের অবস্থাও পুরো শুধরোয়নি। তবু কিছু নগদ হাতে আসতে শুরু করেছে।’’ তাঁর দাবি, আগে ফি-সন্ধেয় আট-ন’লক্ষ টাকা আসত এক-এক দিনের মেহফিলে। প্রধানমন্ত্রীর নোট-নীতি ঘোষণার পরে তা এক ধাক্কায় ৩০-৪০ হাজারে নেমে আসে। এখন আস্তে-আস্তে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। শনি-রবির সন্ধেয় দু’-তিন লক্ষ টাকার মুখ দেখাটাও অনেক বলে মনে করছেন পানশালার কর্তারা।

নোট-আকালের বাজারে কী ভাবে আসছে এত টাকা? ‘‘নেশার টাকা ভূতে জোগায়’’, বলে হাসতে হাসতে চিনার পার্কের এক পানশালা ম্যানেজার শোনালেন, ‘‘ধরুন, চার জনের একটা টেবিল থেকে দু’টো দু’হাজারি নোট এল। আবার ইমারতি কারবারিরা কেউ কেউ দেখছি, তাড়া তাড়া ১০০, ৫০-এর নোটও আনছেন।’’

তবে শুধু পানশালার ম্যানেজার নন, কোনও গয়না বিপণির কর্তা বা দুধের শাঁসালো ডিস্ট্রিবিউটরেরাও রোজ মোটা টাকা জমা দিচ্ছেন। বাগুইআটির দুধ কারবারি রাধারমণ বাগুই হাসছেন, ‘‘এক দিন না-গেলেই এখন ব্যাঙ্ক থেকে ফোন আসছে।’’

আগে কালেভদ্রে নগদ জমা দিলেও পানশালার ম্যানেজারেরা এখন হাতে নগদ বেশি রাখতে তত ভরসা পাচ্ছেন না। নোট-আকালে রোজ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত মুখ দেখতে পেলেই ব্যাঙ্ক-কর্তাদের মুখেও জ্বলে উঠছে হাজার ওয়াটের আলো।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement