ডিপিএস-এর দেওয়া নোটিস ঘিরে বিতর্ক
স্কুল কর্তৃপক্ষের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা যাবে না। তাঁদের সিদ্ধান্তের বিরোধী কোনও বিক্ষোভে অংশও নিতে পারবেন না অভিভাবকেরা। শুধু তাই নয়, স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনও মন্তব্য প্রকাশ্যে করা তো যাবেই না, লেখাও যাবে না নেটমাধ্যম, সংবাদপত্র বা ডিজিটাল কোনও মাধ্যমে। সম্প্রতি কলকাতার বেশ কিছু স্কুল অভিভাবকদের কাছ থেকে এমন ‘মুচলেকা’য় সই করিয়ে নিয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলেও, নিজেদের অবস্থানে অনড় রইলেন নিউটাউনের দিল্লি পাবলিক স্কুল (ডিপিএস) কর্তৃপক্ষ।
কেবল ডিপিএস নয়, হিন্দমোটর এডুকেশন সেন্টার, ডানকুনির পাঠভবন-সহ একাধিক স্কুল একই পথে হাঁটছে। তারাও একই ধরনের মুচলেকা দিয়েছে অভিভাবকদের। সেখানেও বলা হয়েছে নেটমাধ্যমে স্কুলের বিরুদ্ধে কোনও রকমের মন্তব্য বা পোস্ট করা ‘অপরাধ’। নিউটাউনের ডিপিএস স্কুলে ভর্তির ফর্মের সঙ্গেই স্ট্যাম্প পেপারে পড়ুয়াদের বাবা-মাকে এ সব ‘করবেন না’ বলে সই করে জমা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। সেখানে তাঁদের নাম, সন্তানের নামও লিখতে হয়েছে। মোট সাতটি পয়েন্ট রয়েছে ওই ‘মুচলেকা’য়। তার মধ্যে চতুর্থ পয়েন্টে লেখা হয়েছে, স্কুলের সুনাম নষ্ট হয় এমন কোনও কথা লিখিত বা মৌখিক আকারে নেটমাধ্যম, সংবাদপত্র বা ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া যাবে না। করা যাবে না স্কুলের কোনও সিদ্ধান্তের সমালোচনাও। ষষ্ঠ পয়েন্টে লেখা হয়েছে, স্কুলকে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে, এমন কোনও বিক্ষোভে অভিভাবকদের অংশ নেওয়া চলবে না।
স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, নতুন যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের জন্য এই ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে। নিউটাউন ডিপিএস-এর প্রিন্সিপাল সোনালি সেন বলেন, “গত দু’বছর ধরে স্কুলের ফি নিয়ে বিভিন্ন রকমের হুমকির মুখোমুখি হয়েছি আমরা। এমকি, কোর্টের সমনও পাঠানো হয়েছে। স্কুলের গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অভিভাবকেরা। এ সব আমাদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমাদের প্রতি এক ধরনের অবিচার হয়েছে। আমরা কখনওই এর প্রতিবাদ করিনি। কারণ এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমরা মনে করি, এর সরাসরি প্রভাব শিশু মনে পড়ে। এ সবের সমাধান হিসাবে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আমরা একটি নীতি নিয়েছি। স্কুলে পড়ুয়া ভর্তির আগে থেকেই অভিভাবকদের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করছি।’’
অনেক অভিভাবকই ওই ‘মুচলেকা’য় সই করতে নারাজ। ওই ফর্ম সই করে জমা দেওয়া কি অভিভাবকদের জন্য বাধ্যতামূলক? সোনালির দাবি, “এটা বাধ্যতামূলক নয়। যদি কেউ সম্মত না হন তবে তিনি তাঁর বাচ্চাকে এই স্কুলে ভর্তি না-ও করতে পারেন। তবে এই স্কুলে ভর্তি করতে হলে ওই ফর্মে সই করতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, “স্কুল ও অভিভাবকদের মধ্যে তো কোনও বিবাদ নেই। আসলে বিক্ষোভ-আন্দোলনে বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তাঁরা স্কুলে এসে সেটা জানাতে পারেন। নেটমাধ্যমে যে কোনও বিষয় নোংরামির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। যদিও কোনও সমস্যার সমাধান হয় না। তাই আমরা এর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
অভিভাবকদের মধ্যে এ নিয়ে যথেষ্ট অসন্তোষ রয়েছে। তবে ব্যতিক্রমী একাধিক স্কুল। যেমন, রুবি পাবলিক স্কুলের প্রিন্সিপাল জয়িতা মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা এমন কোনও পদক্ষেপ করিনি।’’