ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। —ফাইল চিত্র।
সাম্প্রতিকতম প্রযুক্তির সিগন্যালিং এবং ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অধীনে পরিষেবা শুরু হওয়ার কথা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর। ইথারনেট তরঙ্গ-নির্ভর ওই ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় মাত্র দেড় মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন চালানোর সুযোগ থাকবে। কিন্তু, এত আধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও আদৌ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় ওই সময়ের ব্যবধানে মেট্রো চালানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই মেট্রোপথের এক দিকের প্রান্তিক স্টেশন হাওড়া ময়দানের সামনের দিকে খুব কাছে থাকা ক্রসওভার (যেখান থেকে বিপরীত দিকে আসার জন্য ট্রেন লাইন বদল করে) সেই সংশয় তৈরি করেছে বলে জানাচ্ছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ।
ওই স্টেশনের সামনের দিকে মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যে থাকা ক্রসওভার দিয়ে ভবিষ্যতে কতটা মসৃণ ভাবে ট্রেন ঘোরানো যাবে, সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিয়েই। পাশাপাশি, হাওড়া ময়দান স্টেশনে ডিপোর অনুপস্থিতিও বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মানছেন মেট্রোর রোলিং স্টক বিভাগের আধিকারিকেরা। ডিপো না থাকার ফলে ভবিষ্যতে কোনও বিপত্তি হলে বিকল্প ট্রেন দিয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
মেট্রো পরিষেবা মসৃণ ভাবে চালু রাখার ক্ষেত্রে সফরের শেষে ট্রেন অন্য লাইনে পাঠাতে উপযুক্ত ক্রসওভারের উপস্থিতি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, স্টেশনের পিছনে ইংরেজি ‘এক্স’ আকৃতির ক্রসওভারকে আদর্শ বলে ধরা হয়। উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর ক্ষেত্রে নিউ গড়িয়া সংলগ্ন কবি সুভাষ এবং দমদম স্টেশনে এই ব্যবস্থা রয়েছে।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় পশ্চিমের প্রান্তিক স্টেশন হাওড়া ময়দানের দৈর্ঘ্য ২২০ মিটারের একটু বেশি। ওই স্টেশনের সামনে এসপ্লানেডের দিকে লাইনের ১০০ মিটারের মধ্যে ক্রসওভার রয়েছে। মেট্রোয় যে ছয় কোচের রেক চলবে, তার দৈর্ঘ্য ১৩০ মিটার। ফলে, ওই দূরত্বের মধ্যে কতটা দ্রুত ক্রসওভার পেরিয়ে পরের পরিষেবার জন্য ট্রেন পাশের ডাউন লাইনে নিয়ে যাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন রেলের আধিকারিকেরা। বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের অফিস থেকেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
এরই সঙ্গে, পূর্ব অথবা পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গে কোনও কারণে ট্রেন বিকল হলে কী ভাবে তাকে ফিরিয়ে এনে লাইন খালি করা যাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমন নানা সমস্যা সামলে এই মেট্রোপথে আদৌ কোনও দিন দেড় মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ। প্রাথমিক ভাবে সকালে পরিষেবা শুরু করার জন্য হাওড়া ময়দানের দিকে পাশাপাশি দু’টি প্ল্যাটফর্মে দু’টি এবং এসপ্লানেডের দিকে একটি ট্রেন রাখা হতে পারে বলে খবর।
এক মেট্রোকর্তা বলেন, ‘‘শুরুর দিকে ১৫ মিনিট অন্তর ট্রেন চললে অসুবিধা নেই। তবে এই পুরো পথে পরিষেবা শুরু হলে ন্যূনতম সময়ের ব্যবধানে মেট্রো চালানো নিয়ে উদ্বেগ থাকছে।’’ আগামী ২৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইস্ট-ওয়েস্ট সহ কয়েকটি মেট্রো প্রকল্পের আংশিক দূরত্বে পরিষেবার সূচনা করতে পারেন। তার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মেট্রো সার্কলের চিফ রেলওয়ে সেফটি কমিশনার জনককুমার গর্গের নেতৃত্বে আধিকারিকদের দল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর খুঁটিনাটি পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত পরিদর্শনের পরে উদ্বোধনের বিষয়টি স্থির হতে পারে।