West Bengal Health Department

জাতীয় প্রকল্পের শর্তপূরণে ঢিলেমি রাজ্যের, বরাদ্দ নিয়ে আশঙ্কা

জুনের শুরুতেও অর্ধেকের বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দেওয়ালে নামের স্থায়ী বোর্ড ও নির্দিষ্ট ছ’টি লোগো লাগানো বাকি থাকায় কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি হয়।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩ ০৭:৩৮
Share:

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। —ফাইল চিত্র।

সারা বছর পড়াশোনা না করে পরীক্ষার মুখে পাঠ্যক্রম শেষ করতে গিয়ে ফাঁকিবাজ পড়ুয়ার যে গলদঘর্ম দশা হয়, সেই অবস্থাই হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের। রাজ্যের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো গড়ে সময় মতো দিল্লিতে তারছবি পাঠানো হয়নি। এতেই কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থ আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছেবলে অভিযোগ।

Advertisement

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় দেশ জুড়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা ‘হেল্‌থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’-এরূপান্তরিত করার কাজ শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই রকম ১০১২৮টি কেন্দ্র হওয়ার কথা। তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঠিক করে দেওয়া কিছু কাজ সম্পন্ন করে কেন্দ্রপিছু দু’টি করে ছবি জিও ট্যাগিং-এরমাধ্যমে মন্ত্রকের নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করার কথা এপ্রিল-মে মাসে। কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলেও সেই কাজ শেষ করতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর দেরিকরেছে বলে অভিযোগ। সব চেয়ে করুণ অবস্থা কলকাতায়। সেখানে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোনও কাজই করা হয়নি বলে দাবি।

জুনের শুরুতেও অর্ধেকের বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দেওয়ালে নামের স্থায়ী বোর্ড ও নির্দিষ্ট ছ’টি লোগো লাগানো বাকি থাকায় কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি হয়। রাজ্যের ১০১২৮টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মোট ২০২৭০টি ছবি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পোর্টালেআপলোড করার কথা। সেখানে ৯ জুনের সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য মাত্র ২১৪৫টি ছবি (অর্থাৎ, ১১ শতাংশ কাজ) আপলোড করতে পেরেছে! তার মধ্যে আবার অনেকগুলি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রক বাতিল করেদেয়। কারণ, সেখানে দেওয়ালে লোগো স্থায়ী ভাবে আঁকার বদলে অস্থায়ী ফ্লেক্স টাঙিয়ে সেই ছবি আপলোড করা হয়েছিল।

Advertisement

এর পরেই ১০ জুন তড়িঘড়ি স্বাস্থ্য দফতর সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে ভিডিয়ো-বৈঠকে বসে।সেখানে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য অধিকর্তা শুভাঞ্জন দাস একাধিক সিএমওএইচ-কে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেন ও কার্যত হুঁশিয়ারি দেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাক্ষুব্ধ হয়ে স্বাস্থ্য দফতরে মৌখিক অভিযোগ জানান বলে স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর। যদিওএ ব্যাপারে শুভাঞ্জনকে ফোন করলে তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপেরওউত্তর দেননি।

একাধিক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অভিযোগ, প্রথমে কেন্দ্রের পাঠানো লোগো বসানোর ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরই ঢিলেঢালামনোভাব দেখিয়েছে। দেরির জন্য কেন্দ্র থেকে টাকা বন্ধের উপক্রম হলে স্বাস্থ্যকর্তারাই অস্থায়ী ফ্লেক্স লাগিয়ে কাজ চালাতে বলেছেন। আবার, সেই ফ্লেক্স কেন্দ্রীয় সরকার বাতিল করলে স্বাস্থ্যকর্তারাই উল্টে ভিডিয়ো বৈঠক করেসিএমওএইচ-দের দোষী সাব্যস্ত করে ধমকেছেন! তাঁদের আরও দাবি, মাত্র দু’দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দেওয়ালে স্থায়ী লোগো আঁকতে বলাহয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা কোথা থেকে আসবে, সে সব বলাহয়নি! তার উপরে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে লোগো আঁকার লোক পেতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ, অধিকাংশ দেওয়াললিখন শিল্পী ভোটের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

১৬ জুনের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি থেকে ১৭৮৬২টি ছবি রাজ্য পোর্টালে আপলোড করতে পেরেছে। অর্থাৎ, ৮৮ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে, কলকাতার ১৬৬টি কেন্দ্র থেকে কোনও ছবি এখনও আপলোড হয়নি বলেই খবর।

রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে অনেক বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তাই কাজ শেষ করতে সময় লাগছে। কিন্তু, ৮৮ শতাংশ কাজ তো হয়ে গিয়েছে। টাকা পাওয়া আটকাবে না। কলকাতার বিষয়টি কলকাতা পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে দেখা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement