CBI

Anubrata Mandal: তদন্তে যদি ডাক আসে, বাড়তি চাপে বিরক্ত চিকিৎসক মহলও

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে অনুব্রতের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া, সিওপিডি এবং ইস্কিমিয়ার সমস্যা রয়েছে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২২ ০৫:১৭
Share:

ফাইল চিত্র।

তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে রীতিমতো তেতে রয়েছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। তাঁদের মতে, তদন্তে ডাক বা গ্রেফতারির প্রসঙ্গ উঠলেই নেতা-মন্ত্রীদের একের পর এক এসএসকেএম যাত্রার ঘটনায় সকলের কাছে যে ভাবে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, সেটা হাসপাতালের পক্ষে খুব ক্ষতিকর। চিকিৎসকদের দ্বিতীয় আশঙ্কা, এর পরে দায়িত্বে থাকার কারণে তাঁদের নিয়েও টানাটানি হবে এবং তাঁরা আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়বেন। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, তবে কি এ সব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আগাম ছুটি নিয়ে বসে থাকাটাই শ্রেয় হবে? তা হলেই কি এড়ানো যাবে এই বিপদ?

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে যদিও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমরা তো সরকারি চিকিৎসায় যোগ দিয়েছিলাম সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করতে পারব ভেবেই। এখানে তো সেটা হচ্ছে না! বরং বার বার সাধারণ মানুষের চিকিৎসাই বিঘ্নিত হচ্ছে। আর আমাদের সব দেখে-বুঝেও নীরবে মেনে নিতে হচ্ছে। এমন অহেতুক ‘চাপ’ নিতে হবে কেন?’’ অযথা সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে এ ভাবে হাতিয়ার করার ভাবনায় বিরক্ত চিকিৎসকদের অনেকেই। যদিও অনুব্রতের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা কোনও চিকিৎসককে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই, এমন খবর এখনও নেই। শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কাকে, কখন, কী বিষয়ে ডাকা হবে, সেটা তো বলা মুশকিল। এত আইনি বিষয় আমরা বুঝি না। তাই সারাক্ষণই একটা সামগ্রিক আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এটা অবশ্যই অতিরিক্ত একটা মানসিক চাপ।’’

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে অনুব্রতের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া, সিওপিডি এবং ইস্কিমিয়ার (হৃৎপিণ্ডের ধমনী সরু হয়ে গিয়েছে) পুরনো সমস্যা রয়েছে। মানসিক চাপে সমস্যা আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর শারীরিক অবস্থার দিকে কড়া নজর রাখা একান্ত প্রয়োজন। সেটা একটা চাপ তো বটেই, তার উপর তাঁদেরও ‘সিবিআই ডাকতে পারে’ এমন জল্পনাও বাড়তি চাপ তৈরি করছে বলে মত চিকিৎসক মহলের। শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজের এক বরিষ্ঠ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমাদের কাছে সব রোগীই সমান। তাঁর সমস্যা কী ভাবে দূর করা হবে, সেটাই বড় চিন্তা থাকে। অযথা অন্য কোনও চাপ তৈরি হলে, সেটা তো অবশ্যই বিরক্তির কারণ হবে।’’ প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ মিলিয়ে অসংখ্য রোগীকে দেখতে হয় সরকারি চিকিৎসকদের। কারও আবার সঙ্গে অস্ত্রোপচারও থাকে।

Advertisement

অনুব্রতের চিকিৎসায় সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বুধবার ভর্তি হওয়ার পর থেকে দিনে বেশ কয়েক বার চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখতে যাচ্ছেন। কিন্তু কেউ কোনও বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। বরং বেশির ভাগ সময়েই দেখা যাচ্ছে, উডবার্ন ব্লকের ছোট একটি গেট দিয়ে বেরিয়ে তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব চলে যাচ্ছেন। সূত্রের খবর, অনুব্রতের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিনের পুরনো সমস্যাগুলি আচমকা বেড়ে যাওয়াতেই তাঁকে ভর্তি করতে হয়েছিল। সেটা অন্য হাসপাতাল হলেও একই করত। তাই যদি কখনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ডাকে, তা হলেও তাঁরা একই কথা জানাবেন।

রাজ্যে সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা জানান, চিকিৎসকদের কাছে সব রোগী একই রকম গুরুত্ব পাবেন, এটাই কাঙ্ক্ষিত। যাঁর অধীনে প্রাথমিক ভাবে রোগী ভর্তি হয়েছেন, তিনি রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজন মনে করলে মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হতেই পারে। কিন্তু ভর্তি হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণ মানুষের ভাগ্যে তো সেটা জোটে না, তাই তাঁদেরও আক্ষেপ থাকতেই পারে। আর বাড়তি চাপের বিষয়ে মানসবাবু বলেন, ‘‘এমনিতেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকেরা কাজের চাপে দিশাহারা। সেই গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো অন্য রকম চাপ নিয়ে কাজ করতে হলে, আখেরে রোগীর চিকিৎসায় গোলমাল হয়ে যেতে পারে।’’

এ দিকে বুধবার সারা দিন উডবার্ন ব্লকের সামনে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ও বেষ্টনী থাকলেও, এ দিন সে সব ছিল না। ছিল না অনুব্রতের লালবাতি লাগানো কালো গাড়িটিও। সূত্রের খবর, দোতলার যে কেবিনে অনুব্রত রয়েছেন তার বাইরে রয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশি নিরাপত্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement