প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণ রুখতে জাঁকজমক নয়। নিয়মরক্ষার পুজোতেই শারদোৎসব কেটেছে শহরের আবাসনগুলির। আর কিছু দিন পরেই আসছে আলোর উৎসব। তাকে কেন্দ্র করে আতসবাজির রমরমা থেকে কি এ বার নিজেদের সরিয়ে রাখবেন ওই আবাসনের বাসিন্দারা?
দীপাবলি অর্থাৎ কালীপুজোর আগে এই প্রশ্নটিই আবার ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে সর্বত্র। দুর্গাপুজোর মতো এ বছর কালীপুজোতেও কি সচেতনতার পরিচয় দেবে বহুতলগুলি? শহরের বেশ কিছু আবাসন কমিটির দাবি, তারা এ বছর আতসবাজি পোড়ানো বন্ধ রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে বিষয়ে আবাসনে জারি করা হচ্ছে নোটিসও। করোনায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস। আবার দূষণের ফলেও ফুসফুসের ক্ষতি হয়। সেই জায়গায় করোনা-কালে বাজির দূষণ বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদেরও। আর তাই, কালীপুজো ও দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ৩৯টি লিফটেই নোটিস সেঁটে দিয়েছে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি আবাসন।
ওই আবাসনের আবাসিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এম ভি বিজু বলেন, ‘‘কোভিডে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ফুসফুসের। কালীপুজোর সময়ে আলোর বাজি থেকেও যে দূষণ ছড়ায় তাতে রোগী বা বয়স্ক সকলেরই শ্বাসকষ্ট হয়। সে জন্যই এমন সিদ্ধান্ত।’’ তিনি জানান, কোনও আবাসিক যাতে বাজি কিনে না ফেলেন বা বায়না দিয়ে না দেন, তার জন্য অন্তত ১৫ দিন আগে নোটিস দেওয়া হয়েছে। ওই আবাসনের তিন ও চার নম্বর টাওয়ারের মাঝে একটি বড় পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। সেটি ফাঁকা করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই হয়েছে আতসবাজির প্রদর্শনী। তবে গত বছর থেকেই বন্ধ আধ ঘণ্টার সেই প্রদর্শনী। এ বছর সেই জায়গায় খুদেদের বাজি পোড়ানোও বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এম ভি বিজু।
আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, ফের সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থার অবনতি
মহাবীরতলার একটি আবাসন করোনা-কালে পালন করবে ‘সবুজ দীপাবলি’। ওই আবাসনে রয়েছে ৭২০টি ফ্ল্যাট। প্রত্যেকে মিলে প্রতি বছর আবাসনের ভিতরে একটি মাঠে আতসবাজি পোড়াতেন। কিন্তু এ বার তাঁরা সেই সিদ্ধান্ত বদলেছেন। সেখানকার উৎসব কমিটির আহ্বায়ক অঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘গাছ লাগানো ও সবুজ আলোর বাজি পোড়ানো হবে এ বছর। ওই বাজিতে শুধু আলো হবে, তাতে কোনও রাসায়নিক থাকবে না, দূষণও ছড়াবে না।’’ এ ছাড়াও আবাসনের মাঠটি আলো দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি সেখানে ‘রঙ্গোলি’ আঁকা হবে।
একই রকম ভাবে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারে বিমানবন্দর এলাকার একটি আবাসনেরও। সেখানকার এক কর্মকর্তা সমীরবরণ সাহা জানান, একটি ঘেরা জায়গায় বাজি পোড়াতেন তাঁরা। কিন্তু গত বছর থেকে সেটা বন্ধ করা হয়েছে। আবার বিমানবন্দর কাছে হওয়ায় ফানুস ওড়ানোও নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, ‘‘বাজি পোড়ানোর বিষয়ে আমরা সব সময়েই সতর্ক থাকি। তবে এ বার কোভিড পরিস্থিতিতে আরও বেশি মাত্রায় কড়াকড়ি হচ্ছে।’’ অতিমারির পরিস্থিতিতে আবাসিকদের সচেতন করতে আপাতত মৌখিক ভাবে বাজি না পোড়ানোর কথা বলা হচ্ছে বলেই জানালেন গড়িয়াহাটের একটি আবাসনের সম্পাদক অমিত বসু।
আরও পড়ুন: লোকসভার ক্ষত সারাতে নদিয়ায় কোমর বাঁধছেন মহুয়ারা
কোনও রকম আতসবাজি যাতে কেউ না পোড়ান, তার জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা জারি করেছে ভিআইপি রোডের কৈখালি এলাকার একটি আবাসনও। কর্মকর্তা বিমলেন্দু দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর মতোই সমস্ত বিধি মেনে নিয়মরক্ষার কালীপুজো করা হবে। যৎসামান্য আলো দিয়ে আবাসন সাজানো হবে। তার বেশি কিছু হবে না।’’ তবে আবাসিকদের একাংশের প্রশ্ন, ‘করোনা-কালে আতসবাজি না পোড়ানোর এই বার্তা গোটা শহর মানবে তো?’