ধর্মতলায় বিজেপির শিক্ষক সেলের সমাবেশ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।
তাঁরা ক্ষমতায় এলে শিক্ষকদের পাশে থেকে দাবিদাওয়া পূরণের চেষ্টা করবেন, এমনটাই দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার বিজেপি শিক্ষক সেলের পক্ষ থেকে কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে শুরু হয় ‘শিক্ষা বাঁচাও’ পদযাত্রা। ওই পদযাত্রা ধর্মতলায় শেষ হয়। ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল একটি সমাবেশও হয়। সেই সমাবেশেই দিলীপবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষকদের কোনও প্রত্যাশাই পূরণ করেনি এই সরকার। শিক্ষকদের এখন রাস্তায় নেমে অনশন বিক্ষোভ করতে হচ্ছে। শিক্ষকদের কোনও সম্মান নেই এই রাজ্যে। তাঁরাই সব থেকে বঞ্চিত।’’
এ দিন অবিলম্বে জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণ, প্রাথমিক শিক্ষকদের সর্বভারতীয় বেতন কাঠামো চালু-সহ একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরা হয় বিজেপির শিক্ষক সেলের পদযাত্রায়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রাজীববাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ীকরণের কথা বলেছিলেন। সরকারে আসার পরে ১০ বছর কেটে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি। শিক্ষামিত্রদেরআদিগঙ্গায় নেমে দাবিদাওয়া জানাতে হয়। শিক্ষকেরা তাঁদের দাবিদাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতেই পারেন না। তাই শিক্ষকদের দিনের পর দিন রাস্তায় নেমে অনশন বিক্ষোভ করতে হয়।’’ রাজীববাবুর দাবি, বিজেপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষকদের কথা শোনার জন্য একটি আলাদা সেল তৈরি করা হবে।
সভায় উপস্থিত বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা বলেন, ‘‘খেলা হবে। তবে এ বার বন্দুকের নলের ডগায় খেলা হবে। এ বার ভোটের সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে সমস্ত কেন্দ্রে।’’ আহ্বায়ক দীপল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিজেপির এই শিক্ষক সেলের পদযাত্রায় বহু অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠনও যোগ দিয়েছে। আমরা চাই সমস্ত শিক্ষক তাঁদের অধিকার ফিরে পান।’’
এ দিনের অনুষ্ঠানে বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠন ও চাকরিপ্রার্থী সংগঠন তাঁদের স্মারকলিপি দিলীপবাবুকে দেয়। এ রকমই একটি সংগঠন আপার প্রাইমারি সংগ্রামী মঞ্চের পক্ষে অর্পিতা প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠন অরাজনৈতিক। বহু বার আমাদের দাবির কথা সরকারকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। তাই দিলীপবাবুকেও আমাদের দাবির কথা লিখিত আকারে দিলাম।’’ অর্পিতা জানান, তাঁদের প্রধান দাবি, বছরের পর বছর ধরে চলছে উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। আদালতের রায়ে মেধাতালিকা বাতিলের পরে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বার নির্বাচনের অজুহাতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শ্লথ হলে চলবে না। আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে বলে জানান তিনি। এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-ও।
এ দিকে, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থেমে নেই। যোগ্যতা অনুসারে ধাপে ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়ার কাজও সমান্তরাল ভাবে চলছে। সম্প্রতি তাঁদের বার্ষিক তিন শতাংশ ভাতা বৃদ্ধি এবং অবসরের পরে এককালীন তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষকদের প্রতি আমাদের সরকার খুবই সহানুভূতিশীল।’’