Antidote

প্রতিষেধক কবে? ঘরবন্দি অবস্থা কাটছে না বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের

আকস্মিক কোনও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আর পাঁচ জনের চেয়ে বেশি সমস্যা হয় তাঁদের। আরও বড় সমস্যা হল, স্কুল বা এডুকেটরের চেনা পরিবেশ থেকে সেই বদলের নির্দেশ না আসায়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২১ ০৭:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাতারাতি পরিবর্তন এসেছিল তাঁদের জীবনে। হঠাৎ করেই নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল বাইরে বেরোনো। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুলও। শুধু তো শিক্ষাকেন্দ্র নয়, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জীবনে স্কুলগুলি হল বড় সহায়ক। সেই সঙ্গেই যুক্ত হয়েছিল মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার! কিন্তু আকস্মিক কোনও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আর পাঁচ জনের চেয়ে বেশি সমস্যা হয় তাঁদের। আরও বড় সমস্যা হল, স্কুল বা এডুকেটরের চেনা পরিবেশ থেকে সেই বদলের নির্দেশ না আসায়।

Advertisement

যার জেরে কেউ একাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছিলেন স্কুলে যাবেন বলে, কেউ আবার অস্থির হয়ে ঠিক স্কুলে যাওয়ার সময়ে ইউনিফর্ম পরে ঘরের দেওয়ালে মাথা ঠুকতে শুরু করছিলেন। কারও কারও অস্থির ভাব এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, নিজেই নিজেকে খামচে রক্ত বার করে ফেলছিলেন। কিন্তু স্কুল, এডুকেটর এবং অভিভাবকদের গত ১০ মাসের লড়াইয়ের পরে পরিস্থিতি এখন অনেকটা ভাল। তবু সমস্যা রয়ে গিয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। ফলে পাকাপাকি সুরাহার আশায় এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সাধারণের মধ্যে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়ে গেলেও সব বয়সের বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা সেই সুযোগ পাবেন কবে?

অভিভাবকদের বড় অংশের বক্তব্য, প্রতিষেধক নিলেই যে করোনা-মুক্তি ঘটবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবু যাঁদের মাস্ক পরানোই একটা বড় ঝক্কির ব্যাপার, দূরত্ব-বিধি এখনও যাঁদের বুঝিয়েই ওঠা যায়নি, তাঁদের প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে কিছুটা সুরাহা পাওয়া যেতেও পারে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক কিশোরের বাবা সঞ্জীব পাল বললেন, ‘‘প্রথম প্রথম ছেলেকে মাস্ক পরানো নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। তবে এখন ওর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, আমাদের বাড়িতে আরও কয়েক জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর আসে। তারা প্রত্যেকে কিন্তু মাস্ক মুখে রাখা অভ্যাস করে ফেলতে পারেনি। ফলে ভয়ে তাদের সঙ্গে ছেলের খেলা বন্ধ রাখতে হয়েছে। অন্তত প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে কিছুটা সুরাহা হয়।’’

Advertisement

যাদবপুরের সোহিনী সাঁতরার দাবি, ‘‘আমার মেয়ের বয়স আটত্রিশ বছর। দেড় বছর বয়সে ওর অটিজ়ম ধরা পড়ে। এত দিন ধরে চেষ্টা করে অনলাইনে ক্লাস করানো শেখাতে পারলেও মাস্ক পরা কিছুতেই অভ্যাস করাতে পারিনি। এখনও নিজে তো পরেই না, অন্য কাউকে মাস্ক পরে দেখলে চিৎকার শুরু করে। মাস্ক ছাড়া বাইরে বার করার ঝুঁকি নিতে পারি না। এতগুলো মাস ধরে ঘরবন্দি থাকায় ওর ক্ষতিই হচ্ছে। প্রতিষেধক পেলে অন্তত একটু বাইরে বার করতে পারব।’’

স্পেশ্যাল এডুকেটর স্বাতী বসু বললেন, ‘‘প্রতিষেধক পেলে ঘরবন্দি অবস্থা অবশ্যই কাটানো যাবে। কিন্তু কোনও হাসপাতালে নয়, স্কুলের চেনা পরিবেশে রেখে এঁদের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সুচ ফোটানো কতটা সহজ হবে, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে।’’ বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের একটি স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অমৃতা পাণ্ডা বললেন, ‘‘গন্ধ পাচ্ছেন কি না, বা স্বাদ আছে কি না, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অনেকেই এটুকুও বোঝাতে পারেন না। ফলে বাইরে নিয়ে গিয়ে আক্রান্ত করার ঝুঁকি নেওয়া যায় না। অন্তত প্রতিষেধকটা নেওয়া থাকলে ভাল হয়।’’

স্বাস্থ্য মন্ত্রক যদিও জানিয়েছে, প্রতিষেধক দেওয়ার তৃতীয় পর্যায় চলছে এখন। তাতে প্রবীণ এবং কোমর্বিডিটি রয়েছে, এমন ৪৫ থেকে ৫৯ বছরের যে কেউ প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। কোমর্বিডিটির যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতাকেও রাখা হয়েছে। তবে এখনই সব বয়সের বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে আলাদা করে কোনও পরিকল্পনা করা হয়নি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীও বললেন, ‘‘এখনও এ নিয়ে আলাদা করে কোনও পরিকল্পনা নেই।’’

ডেভেলপমেন্ট পেডিয়াট্রিক থেরাপিস্ট জাহির আব্বাস যদিও বললেন, ‘‘প্রতিষেধক পেলেই হবে না। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের উপরে এর কী প্রভাব হতে পারে, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারেরই আগে স্পষ্ট ভাবে জানানো উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement