পুলিশের ভুঁড়ি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ডায়াবেটিসেরও, দাবি গবেষণায়

পুলিশের ভুঁড়ি কেন, প্রশ্ন করেছে হাইকোর্ট। কিন্তু এরও আগে রাজ্যের চিকিৎসক মহল এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা জানিয়েছিলেন, এ রাজ্যের পুলিশের ভুঁড়ি বাড়ছে দ্রুত।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৯
Share:

ফাইল চিত্র

পুলিশের ভুঁড়ি কেন, প্রশ্ন করেছে হাইকোর্ট। কিন্তু এরও আগে রাজ্যের চিকিৎসক মহল এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা জানিয়েছিলেন, এ রাজ্যের পুলিশের ভুঁড়ি বাড়ছে দ্রুত। তারই জেরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের অনেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকদের কাছে যে প্রবণতা খুবই মারাত্মক।

Advertisement

সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয় ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস’-এর জার্নালে। আয়োজক ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার বক্তব্য, সমীক্ষাটি হাইকোর্টের ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই প্রাসঙ্গিক। কিছু দিন আগে প্রায় ২২০০ পুলিশের উপরে করা সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, তাঁদের ১২ শতাংশই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর আরও ২০ শতাংশের যে কোনও সময়ে ডায়াবেটিস হতে পারে। যে ১২ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাঁদের মধ্যে আবার ১০ শতাংশ নিজেদের অসুখটা নিয়ে ওয়াকিবহাল, আর দুই শতাংশ জানেনই যে না তাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। সকলেরই ওজন, রক্তচাপ, ভুঁড়ি মেপে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়েছিল। এঁদের সকলেরই যে ওজন খুব বেশি, তা নয়। কিন্তু কোমড়ের বেড় যথেষ্ট বেশি অর্থাৎ, ভুঁড়ি রয়েছে অনেকটাই। সমীক্ষক দলের অন্যতম সদস্য, চিকিৎসক সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, কোমরের মাপকে উচ্চতা দিয়ে ভাগ করে যা বেরিয়েছে, তা থেকে ঝুঁকির বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আগে বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই দেখে ডায়াবেটিসের ঝুঁকির বিচার করা হতো। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট বদলেছে। শরীরের বাকি অংশে তেমন উল্লেখযোগ্য মেদ না থাকলেও যদি তলপেটে মেদ থাকে, তা হলে সেটা যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ভাবে এশীয় পুরুষদের কোমরের মাপ যদি ৯০ সেন্টিমিটারের বেশি এবং মহিলাদের কোমরের মাপ ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি হয়, সেটা বিপদের ইঙ্গিত দেয়।’’

পুলিশের ভুঁড়ি নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন এক ব্যক্তি। শুক্রবার ওই মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে প্রশ্ন তুলেছেন, ভুঁড়িধারী পুলিশের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে। সমীক্ষক দলের সদস্যেরাও জানিয়েছেন, ভুঁড়ি থাকলে শারীরিক সক্ষমতা কমতে বাধ্য।

Advertisement

চিকিৎসকদের মতে, সেনাবাহিনীতে ভুঁড়ি হলে চাকরিই থাকে না, কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে তা নয়। সেই কারণেই পুলিশের মধ্যে ভুঁড়ি কমানোর কোনও তাগিদই দেখা যায় না। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের মতো চাকরিতে যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাটাই প্রধান কাজ, সেখানে এত ভুঁড়ি হচ্ছে কেন? সমীক্ষক দলের সদস্যেরা জানিয়েছেন, এ নিয়ে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছিলেন। ট্র্যাফিক পুলিশের একটা অংশ জানিয়েছে, অটো সিগন্যাল হয়ে যাওয়ায় তাঁদের ছোটাছুটি কমে গিয়েছে। সার্জেন্টরা জানিয়েছেন, তাঁরা বাইকেই ঘোরেন। ভিআইপি নিরাপত্তা বা কোনও ব্যক্তি বিশেষের পাহারায় থাকলেও দৌড়ঝাঁপ থাকে না। সেই কারণেই তাঁদের অনেকেরই ভুঁড়ি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। আর যাঁদের বসে থাকার উপয়া নেই, নিত্য ছোটাছুটি লেগেই রয়েছে, তাঁদের ভুঁড়ি অনেক কম বা নেই বললেই চলে।

সমীক্ষক দলের আর এক সদস্য, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট শুভঙ্কর চৌধুরী বলেন, ‘‘যাঁদের উপরে সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তাঁদের বয়সসীমা ২১ থেকে ৬০-এর মধ্যে হলেও একটা বড় অংশই ৩৫-৩৬ বছরের। তাঁদেরও ভুঁড়ি আছে। যথাযথ খাবার আর নিয়মিত ব্যায়াম না করাতেই এমন হয়েছে।’’

শুভঙ্করবাবু কথা প্রসঙ্গে জানান, রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রী প্রায়ই ঠাট্টার ছলে বলতেন, সোজা হয়ে দুটো পা জড়ো করে নীচের দিকে তাকালে যদি বুড়ো আঙুল স্পষ্ট দেখা যায়, তা হলে বুঝতে হবে সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ‘‘কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই নিজের শরীর কতটা ঠিকঠাক আছে তা বুঝতে এই বিধান বেশ কার্যকর। যে কেউ এটা করে দেখতে পারেন।’’

কিন্তু সত্যিই কি ভুঁড়ি নিয়ে এত হই চইয়ের প্রয়োজন আছে? শুক্রবার আদালতে তো এও পেশ করা হয় যে, দিব্যি ভুঁড়ি নিয়েই এক অফিসার ২০১৫ সালে পুলিশ ম‌েডেল পেয়েছেন। তা হলে? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ভুঁড়ির ক্ষতির দিক সুদূরপ্রসারী। কার্ডিও-মেডিসিনের চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মেটাবলিক সিনড্রোম নামে একগুচ্ছ ঝুঁকির দিক রয়েছে যা কার্ডিও-ভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে অন্যতম হল সেন্ট্রাল ওবিসিটি। সোজা বাংলা যাকে বলে ভুঁড়ি। রক্ত চলাচল সংক্রান্ত যে কোনও অসুখ, অর্থাৎ স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ভুঁড়ি। গোটা বিশ্ব জুড়েই এখন মেটাবলিক সিনড্রোম-এর উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, নিঃশব্দে এই সমস্যাগুলি মানুষকে বড়সড় ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’’

তাঁর মতে, ভুঁড়িই বহু ক্ষেত্রে বিপদের আগাম সঙ্কেত দেয়। অর্থাৎ, যত সমস্যা সব জড়ো হয়েছে ওই মধ্যপ্রদেশেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement