ইস্ট-ওয়েস্ট, নর্থ-সাউথ এবং জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্পের একমাত্র জংশন হবে এসপ্ল্যানেড। তাই, গুরুত্ব বাড়ছে এসপ্ল্যানেড স্টেশনের। রাজ্য সরকার এবং মেট্রো রেল-কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, লন্ডনের কিঙ্গস ক্রস-এর ধাঁচে বড় স্টেশন চত্বর তৈরি হবে এসপ্ল্যানেডে। ইতিমধ্যেই এসপ্ল্যানেডে ওই স্টেশন তৈরির জন্য সেনার হাত থেকে জমি রাজ্য ও মেট্রো রেলের হাতে তুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। তার পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে পরিকল্পনা। প্রাথমিক একটি পরিকল্পনার নকশা তৈরি করেছে রাইটস। ঠিক হয়েছে, পুরো স্টেশন প্রকল্পই হবে মাটির তলায়। তিনটি মেট্রো রুটের স্টেশন হবে মাটির নীচে তিনটি পৃথক স্তরে।
স্টেশন কোথায় হবে, কী ভাবে একটি স্টেশনের সঙ্গে অন্যটির যোগসূত্র তৈরি হবে, কতগুলি ঢোকা বেরোনোর পথ হবে, ভাবনাচিন্তা চলছে তা নিয়েও। মেট্রো স্টেশনের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ও বাসের পার্কিংও মাটির নীচে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। প্রাথমিক ভাবনা, মেট্রো রেল ও রাজ্য যৌথ ভাবে প্রকল্প গড়বে। সবটাই এখনও ভাবনার স্তরে। মেট্রো রেল, রাজ্যের পূর্ত দফতর, পরিবহণ দফতর এবং কলকাতা পুলিশ মিতিল ভাবে আলোচনা করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে। খরচ কত হবে, কার ভাগে কত খরচের দায়ভার চাপবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বেশ কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হবে বলে মনে করছেন নবান্নের কর্তারা। কিন্তু এরই মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ।
চিন্তার ভাঁজ
কিঙ্গস ক্রস স্টেশন। লন্ডন।
বিধান মার্কেট: স্টেশনের কাজ শুরু করতে গেলে তুলে দিতে হবে বিধান মার্কেটকে। সে ক্ষেত্রে পুনর্বাসন ব্যবস্থা কী হবে, তা সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
শহিদ মিনার: প্রাচীন সৌধ। তাই, মাটির নীচে স্টেশন তৈরির কাজ হলে ওই সৌধের ক্ষতি হবে কি না, হলে কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তা নিয়ে মতামত নিতে হবে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের।
বাস টার্মিনাস: কলকাতা হাইকোর্ট শহিদ মিনার চত্বর থেকে বাস টার্মিনাস সরানোর নির্দেশ দিয়েছে আগেই। এসপ্ল্যানেড স্টেশন চত্বর তৈরির সময়ে তাই পুরো বাস টার্মিনাসকেই মাটির তলায় নিয়ে যেতে চায় সরকার। আর উপরে সেই জায়গা ঢেকে দিতে চায় সবুজে। এ জন্য হাইকোর্টের অনুমতি প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই হয়তো কালবৈশাখী
পার্কিং এবং র্যাম্প: এত বড় স্টেশনের জন্য প্রয়োজন বিরাট পার্কিং লট। বাসস্ট্যান্ডের সঙ্গে সেটিও সরকার করতে চায় মাটির তলায়। কিন্তু অত জায়গা পাওয়া যাবে কি না, করতে গেলে র্যাম্প কী রকম হবে, তার ঢালই বা কতটা হবে— এ সব নিয়ে এখনও বিস্তর ধন্দ রয়েছে।
ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা: তিনটে রুটের জংশন হলে সকাল ন’টার পর থেকে বিপুল যাত্রীর ভিড় হবে এসপ্ল্যানেড চত্বরে। হাওড়া এবং কলকাতা দক্ষিণ ও উত্তর শহরতলির যাত্রীরা আসবেন এসপ্ল্যানেডে। এই বিপুল চাপ সামলাতে প্রচুর ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা করতে হবে। সে জন্য বিপুল পরিকল্পনাও প্রয়োজন।
শৌচাগার: এত যাত্রীর আসা-যাওয়ার কথা মাথায় রেখে তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগার করতে হবে প্রশাসনকে। তা নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা প্রয়োজন।
গ্রাফিক্স: অমিতাভ চন্দ্র