Illegal Dog Breeds

দুই নয়া ধারা কুকুরের অবাধ প্রজনন-বিক্রি ঠেকাতে, রাজ্যে প্রয়োগ হয়নি নোটিস সত্ত্বেও

রৈবতের আরও অভিযোগ, করোনা অতিমারির সময় থেকে গ্যালিফ স্ট্রিটে অবাধে কুকুর বিক্রি শুরু হয়েছে। নিয়মানুযায়ী, পোষ্যের গলায় মাইক্রোচিপ বসিয়ে তবেই তাকে বিক্রি করা যাবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১৫
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

সারা দেশে পোষ্য কুকুরের অবাধ প্রজনন ও বিক্রি ঠেকাতে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন, ১৯৬০ সংশোধন করে দু’টি নতুন ধারা যোগ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার বোর্ডের উদ্যোগে ২০১৭ সালে প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস (পেট শপ) সংক্রান্ত ধারা এবং ২০১৮ সালে প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস (ডগ ব্রিডিং অ্যান্ড মার্কেটিং) ধারা দু’টি যুক্ত হয়। অভিযোগ, সাত এবং ছয় বছর আগে ওই ধারা দু’টি এলেও পশ্চিমবঙ্গে এখনও সেগুলির প্রয়োগ করা হয়নি। এ বিষয়ে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতর উদ্যোগ নেয়নি বলেও অভিযোগ। অথচ এই নিয়ে কেন্দ্রের তরফে ১০ বার নোটিসও পাঠানো হয়েছিল।

Advertisement

সম্প্রতি শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী পশুপ্রেমী সংস্থা তথ্য জানার অধিকার সংক্রান্ত আইনের মাধ্যমে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। উত্তরে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতর জানিয়েছে, রাজ্যে ওই দু’টি ধারা এখনও প্রয়োগ করা যায়নি। রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা ও কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নে ব্যর্থতার অভিযোগ করে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইতিমধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছে। ওই সংস্থার কর্ণধার রাধিকা বসুর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের আইন না মানায় শহরে যত্রতত্র পোষ্য কুকুরের প্রজনন করানো হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে অকালে অনেক পোষ্য প্রাণও হারাচ্ছে। কেন্দ্রীয় আইন অবিলম্বে এ রাজ্যে প্রণয়নের আবেদন জানিয়ে আমরা হাই কোর্টে মামলা করেছি।’’

ওই মামলায় সংস্থার তরফে আইনজীবী রৈবত বন্দোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় আইনে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পোষ্যের প্রজননের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কোনও পোষ্য কুকুরের পুরুষ শাবক হলে পরে তাদের দু’জনের মধ্যে প্রজনন কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে বংশগত সমস্যা তৈরির আশঙ্কা প্রবল। কিন্তু বাস্তবে কলকাতায় পোষ্য কুকুরের প্রজননের ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই মানা হচ্ছে না।’’ রৈবত আরও জানান, কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, প্রজননকারী সংস্থাগুলিকে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতর থেকে এককালীন পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে লাইসেন্স করাতে হবে। একই ভাবে পুরসভার থেকেও লাইসেন্স নিতে হবে। অভিযোগ, কোনও লাইসেন্স ছাড়া, পরিকাঠামোবিহীন ভাবেই অবাধে কুকুরের প্রজনন ও বিক্রি করার কাজ চলছে। সূত্রের খবর, কলকাতায় প্রায় ছ’শো জায়গায় কুকুরের প্রজনন হয় ও তিনশো জায়গায় বিক্রি করা হয়। লাইসেন্স ছাড়াই এই কাজ চলায় প্রশাসন মোটা রাজস্বও হারাচ্ছে।

Advertisement

রৈবতের আরও অভিযোগ, করোনা অতিমারির সময় থেকে গ্যালিফ স্ট্রিটে অবাধে কুকুর বিক্রি শুরু হয়েছে। নিয়মানুযায়ী, পোষ্যের গলায় মাইক্রোচিপ বসিয়ে তবেই তাকে বিক্রি করা যাবে। কমপক্ষে আট সপ্তাহ বয়স না হলে কুকুর বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে
মাইক্রোচিপ ছাড়াই, ছ’সপ্তাহ বয়সেই বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে কুকুর। অনেকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পোষ্যের ভরণপোষণের খরচ সামলাতে না পেরে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে চলে যান বলেও অভিযোগ। এর পাশাপাশি, তিনি জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের আবহাওয়ায় মানাতে পারে না, এমন প্রজাতির কুকুরও বেআইনি ভাবে প্রজনন করা হচ্ছে। রৈবত বলেন, ‘‘সাইবেরিয়ার মতো প্রবল ঠাণ্ডার দেশে হাস্কি প্রজাতির কুকুরের বসবাস। কিন্তু শহরে প্রজনন করানোর ফলে এখানে গরমে থাকাটাই ওদের পক্ষে খুব কষ্টের।’’

সাত বছর পরেও রাজ্য নতুন ধারা প্রয়োগ করতে পারল না কেন? রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের সচিব বিবেক কুমার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় আইনের নয়া ধারা দু’টি বাস্তবায়িত করতে চলতি বছরের ১৫ মার্চ স্টেট অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পোষ্য কুকুরের প্রজনন ও বিক্রির দোকান সংক্রান্ত আইন এ রাজ্যে বাস্তবায়িত করতে আমরা একটি পোর্টাল তৈরি করছি। আশা করছি, শীঘ্রই এই পোর্টাল তৈরির কাজ শেষ হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement