রমরমিয়ে: বিধাননগরের জগৎপুরে বিধি উড়িয়ে এ ভাবেই বহাল তবিয়তে চলছে খাটাল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
খালের এক দিকে খাটাল। অন্য দিকে পুলিশ ফাঁড়ি।
এলাকার লোকজনের দাবি, কেউ কারও দিকে তাকায় না। যার জেরে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শহরের বুকে বছরের পর বছর রমরমিয়ে চলছে বিরাট খাটাল, বিধাননগর পুর এলাকার জগৎপুরের কাছে, আদর্শনগরে। অভিযোগ, খালের জমির উপরে রয়েছে খাটালটি।
খাটাল-মালিকের অবশ্য দাবি, দ্রুত তিনি এই ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন। অন্য দিকে, স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে উদ্যোগী হওয়া সত্ত্বেও পুরসভার হেলদোল না থাকায় খাটাল নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
বিধাননগর পুর এলাকার জগৎপুর দিয়ে বেরিয়েছে বাগজোলা বাইপাস (বিবি)-১ খাল। আদর্শনগরে সেই খালের ধারেই রমরমিয়ে চলছে বিরাট খাটাল। মালিক রতন দে-র দাবি, ‘‘আমার জন্মের আগে থেকে খাটাল রয়েছে। আমার বয়স হয়েছে। আমি আর কয়েক মাসের মধ্যে এই ব্যবসা বন্ধ করে দেব।’’
এক সময়ে দমদম এলাকায় বাগজোলা খালের ধারে বিরাট বিরাট খাটাল ছিল। সেই সব খাটালের মালিক ছিলেন বর্তমানে প্রয়াত এক পুরপ্রতিনিধি। তবে সে সময়ে প্রশাসন খাটাল সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে দেয়। সল্টলেক ও রাজারহাট এলাকা যুক্ত হয়ে বিধাননগর পুরসভা তৈরি হলেও সেখানে কী করে খাটাল চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, খাটালের গোবর-সহ নানা আবর্জনা এলাকার খাল ও নর্দমায় ফেলা হয়। তার ফলে দূষণ বাড়ছে। তবে শুধু আদর্শনগরই নয়, বাগুইআটির বাগুইপাড়া এলাকাতেও খাটাল চলছে বহু বছর ধরে। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের সময়েও ওই সব খাটাল উচ্ছেদ করা যায়নি।
বিবি-১ খালের পাশে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খাটালের উল্টো দিকেই রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। যদিও পুলিশের দাবি, খাটাল উচ্ছেদ তাদের কাজ নয়। পুরসভা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকবে। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, ওই খাটালটি নিয়ে অতীতেও থানা-পুলিশ হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।
এ নিয়ে নিজের অসহায়তা প্রকাশ করে স্থানীয় ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি উল্টে পুরসভার বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি গত জুলাইয়ে বিধাননগর পুরসভাকে চিঠি দিয়েছি খাটাল উচ্ছেদের জন্য। এলাকায় দূষণ বাড়ছে। তা সত্ত্বেও কোনও হেলদোল নেই কোনও মহলে। আমি একা পুরপ্রতিনিধি কী করতে পারি? শহরের বুকে তো খাটাল চলার কথাই নয়।’’
পুরপ্রতিনিধির অভিযোগ, খাটালটি খালের জমি দখল করে রেখেছে। সে দিকেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনও নজর নেই। খাটালের মালিকের যদিও দাবি, বহু বছর ধরে ওই ভাবেই খাটালটি রয়েছে। তিনি নতুন করে কিছু করেননি।
বিধাননগর পুরসভার নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খাটাল উচ্ছেদের জন্য আমাদের পৃথক কোনও দফতর নেই। এমন ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হলে আমরা জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করি। ইতিমধ্যেই খাটাল ব্যবসায়ীদের ডেকে আমরা সতর্ক করেছি।’’