Human Trafficking

সাফল্য পেয়েও স্বয়ংসিদ্ধা ‘বন্ধ’ হল উৎসস্থলেই

স্বয়ংসিদ্ধা শুরুর পরে গত কয়েক বছরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে মেয়ে পাচার কয়েক গুণ কমে গিয়েছিল বলে দাবি পুলিশের।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

মানব পাচার রোধে স্কুলের মেয়েদের সচেতন করতে ২০১৬ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ প্রকল্পের সূচনা করেছিল। জেলা পুলিশের দাবি, প্রথম এক বছরেই সাফল্য আসে। প্রকল্পের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, চার বছরে স্বয়ংসিদ্ধার বার্তা পৌঁছেছিল ওই জেলারই ৩৮০টি স্কুলে। পরে জেলার ৮টি কলেজেও পৌঁছয় সেই বার্তা। ৩৪০১৫ জন ছাত্রী এবং ১৮৪৪২ জন ছাত্রের পাশাপাশি ৭০২৭০ মানুষের কাছেও তা পৌঁছয়। কিন্তু ‘সফল’ সেই প্রকল্প কোনও অজ্ঞাত কারণে ছ’মাস ধরে বন্ধ ওই জেলার স্কুল-কলেজে!

Advertisement

অথচ স্বয়ংসিদ্ধা শুরুর পরে গত কয়েক বছরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে মেয়ে পাচার কয়েক গুণ কমে গিয়েছিল বলে দাবি পুলিশের। সচেতনতা শিবির থেকে পাঠ নিয়ে অনেক মেয়েই পাচারকারীর ডেরা থেকেও বেরিয়ে এসেছে। এমনকি মেয়েরাই পাচারকারীদের ধরিয়ে দিয়েছে এবং বাল্যবিবাহ রুখেছে।

স্বয়ংসিদ্ধার শুরুটা হয়েছিল ওই জেলারই মথুরাপুর থেকে নিখোঁজ কিশোরী আয়েশার (নাম পরিবর্তিত) উদ্ধার পর্ব ঘিরে। ২০১৬-র জানুয়ারিতে অচৈতন্য ওই কিশোরীকে দিল্লির গাজিয়াবাদের হাসপাতালে ফেলে রেখে যায় পাচারকারীরা। সেখানকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়ালের সাহায্যে তাকে উদ্ধার করে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরীক্ষায় জানা যায় পাচারকারীর মাধ্যমে তার শরীরে এইচআইভি বাসা বেঁধেছে। এর পরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৎকালীন এক পুলিশকর্তার নেতৃত্বে পাচার রোধে কর্মসূচি নেয় পুলিশ। এগিয়ে আসে আয়েশাকে উদ্ধার করা দিল্লির সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

Advertisement

প্রথম এক বছরেই প্রকল্পের সাফল্য দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটি সরকারি ভাবে চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। ঘোষণা করেন, সব জেলায় স্বয়ংসিদ্ধা চালু হবে। সিআইডি, জেলা পুলিশ, ইউনিসেফ এবং রাজ্যের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় শিবির করে এ বিষয়ে পড়ুয়াদের সচেতনতা বাড়ানোর। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও গত কয়েক মাস স্বয়ংসিদ্ধা থমকে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। পুরুলিয়া, শিলিগুড়ি এবং নদিয়ায় কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিক্ষিপ্ত ভাবে কাজ চালাচ্ছে। বাকি জেলায় শুরুই হয়নি!

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্কুলগুলিতে শিবির করত, তাদের তরফে অনন্যা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের বলা হয়েছিল, মডেল তৈরি করে শিক্ষক, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে প্রশিক্ষণ দিতে। সে কাজ হয়ে গিয়েছে। এখন তাঁরা নিজেদের মতো কাজ করছেন!’’ ইউনিসেফের এক আধিকারিকের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘পুলিশ, সিআইডি আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন পাঠাত। পুলিশ আর ডাকে না। অন্য জেলার পুলিশও ডাকেনি।’’

প্রথম থেকে প্রকল্পে যুক্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার বক্তব্য, ‘‘সরকার প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগেই মডেল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেটিকে চালিয়ে যাওয়া জরুরি ছিল। অথচ ২০১৮-র শেষ থেকে এটি ধুঁকতে শুরু করে।’’ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির দাবি, পুলিশ আধিকারিকেরা স্কুলে গেলে প্রকল্পে তার বেশি প্রভাব পড়ত। অথচ শেষ দিকে তা হত না।’’

দিল্লির যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে স্বয়ংসিদ্ধার সূচনা, তার তরফে ঋষিকান্ত অবশ্য প্রকল্পটি নিয়ে আজও আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি মেয়েকে স্বয়ংসিদ্ধা করা। সেই কাজ মানুষের কাছেও পৌঁছেছিল। সাফল্যের সেটিই চাবিকাঠি। আপাতত বন্ধ হলেও ফের চালু হলে ফল মিলবেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement