Illegal Cattle Sheds

শহরের ভিতরেই রমরমিয়ে খাটাল, বাসিন্দাদের অভিযোগ সত্ত্বেও উচ্ছেদ হয়নি 

কলকাতা পুরসভার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় রমরমিয়ে চলা এই খাটালের ব্যবসা ঘিরে বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কয়েক দশক ধরে এই মাঠ দখল করে রমরমিয়ে চলছে গরু, মোষ পালন।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩২
Share:

বহাল: এ ভাবেই বৌবাজার এলাকায় নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে এই খাটাল। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

বাড়িতে ঘেরা মাঠের এক পাশে বাঁশের কাঠামো দিয়ে তৈরি করা নিচু একটি ঘর। চারপাশে প্লাস্টিকে ঘেরা থাকলেও ঘরের ভিতরের মেঝেয় ইট পাতা। ভিতরে বাঁধা রয়েছে গোটা ছয়েক গরু এবং মোষ। গুমটি সংলগ্ন মাঠেও দশটির মতো গরু-মোষ বাঁধা। ঘরের ভিতরে তাদের বর্জ্যে এমন অবস্থা যে পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ও নাকে রুমাল দেওয়া ছাড়া গতি নেই!

Advertisement

কোনও গ্রামের দৃশ্য নয়, এ ছবি বৌবাজার সংলগ্ন কৃষ্ণ লাহা লেনের। মধ্য কলকাতার এই এলাকা মুচিপাড়া থানার অন্তর্গত। কলকাতা পুরসভার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় রমরমিয়ে চলা এই খাটালের ব্যবসা ঘিরে বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কয়েক দশক ধরে এই মাঠ দখল করে রমরমিয়ে চলছে গরু, মোষ পালন। পুলিশ, পুরসভা, প্রশাসনকে বার বার জানানো পরেও তা বন্ধ হয়নি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর খাটাল চলার জেরে এক দিকে যেমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা, তেমনই মশাবাহিত রোগের উৎপাতও সহ্য় করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, গরু, মোষের বর্জ্যের জেরে গরম পড়লেই এলাকায় মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ে। প্রতি বছর পাড়ার একাধিক বাসিন্দা ডেঙ্গি-সহ নানা মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হন। শুধু তা-ই নয়, বাসিন্দারা মাঠ দখলের অভিযোগও তুলেছেন। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আগে এই মাঠে বাচ্চারা খেলাধুলো করত। কিন্তু বৃষ্টির জলের সঙ্গে দিনের পর দিন গোবর মিশে মাঠও আর খেলার উপযুক্ত নেই।’’

পুর আইন অনুযায়ী শহরে খাটাল নিষিদ্ধ। বেআইনি ভাবে কোনও খাটাল চললে ব্যবস্থা নিতে পারে পুরসভা। পুলিশের সাহায্য নিয়ে মালিককে নোটিস পাঠিয়ে খাটাল উচ্ছেদ করার আইনও রয়েছে। কিন্তু এখানে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ব্যবস্থা নিয়ে উচ্ছেদ করা তো দূর, বাসিন্দাদের তরফ থেকে বার বার চিঠি দেওয়ার পরেও খাটাল উচ্ছেদ হয়নি। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এই খাটাল উচ্ছেদ করতে গত দশ বছর ধরে কোথায় না যাইনি আমরা? বাসিন্দাদের সই নিয়ে পুরসভা, থানা সবাইকে জানিয়েছি। এমনকি ‘দিদিকে বলো’তেও ফোন করা হয়েছে। সবাই শুধু দেখছি, দেখব বলে আশা দিয়েছেন। কাজ কিছুই হয়নি।’’

Advertisement

কয়েক দশক ধরে যে ওই এলাকায় তাঁর খাটাল রয়েছে, তা মেনে নিলেন সেটির মানিক বিল্লা রায়। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা-কাকাদের ব্যবসা। তখন থেকেই চলছে। বন্ধ করে দিলে চলবে কী করে?’’ শহরে খাটাল রাখা যে বেআইনি, সে কথা বলায় তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম দুধ নিতে এসেছেন। তাই কথা বলছিলাম। দুধ নেওয়ার হলে বিকেলে আসবেন, আইন শেখাতে আসবেন না।’’

এ দিকে খাটাল সরাতে তিনি সচেষ্ট, তেমনই দাবি করেছেন ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি ইন্দ্রনীল কুমার। একাধিক বার বরোর আলোচনায় এই বিষয়টি তুলেছেন বলেও দাবি করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এটা নিয়ে পড়ে আছি। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় আমি এটা জানিয়েছে। চিঠিও দিয়েছি। প্রয়োজনে আবার চিঠি দেব।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিচ্ছেন কলকাতা পুরসভার এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কেন খাটালটি এত দিনে সরানো গেল না, তা খতিয়ে দেখব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement