Work culture in Bengal

সম্পাদক সমীপেষু: কর্মহীন রাজ্য

একটা সময় ছিল যখন সারা দেশ থেকে মানুষ কাজের জন্য বাংলায় আসতেন। সেটা ছিল আমাদের গৌরবের দিন, যা এখন ইতিহাস। মারোয়াড়ি পাড়া, গুজরাতি পাড়া, পঞ্জাবি এলাকা— এ সবই ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৩৫
Share:

অভিরূপ সরকারের ‘কাজের খোঁজে বাংলায়’ (৩-৩) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আমার বক্তব্য, প্রবন্ধটির শিরোনাম ‘কাজের খোঁজে বাংলা থেকে ভিন রাজ্যে’ হলে আরও ভাল শোনাত। একটা সময় ছিল যখন সারা দেশ থেকে মানুষ কাজের জন্য বাংলায় আসতেন। সেটা ছিল আমাদের গৌরবের দিন, যা এখন ইতিহাস। মারোয়াড়ি পাড়া, গুজরাতি পাড়া, পঞ্জাবি এলাকা— এ সবই ছিল। ছিল গঙ্গার পাড় ধরে দু’ধারে চটকল শ্রমিকদের বস্তি। অন্যান্য কলকারখানার চিমনির ধোঁয়াও দেখা যেত বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। এ সব ছিল ‘এগিয়ে বাংলা’র প্রতিচ্ছবি।

Advertisement

কিন্তু এখন বাংলায় কর্মসংস্কৃতিতে একেবারেই ভাটার টান। প্রত্যেক বছর ঘটা করে বড় শিল্পপতিদের এনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে শিল্প সম্মেলন করা হয়, কিন্তু একটা বৃহৎ মাপের শিল্পও এ রাজ্য গড়ে ওঠে না। শাসক দল ভোটের বাজারে সুবিধা তোলে আংশিক বাহুবলে, বাকিটা অকাতরে অনুদান বা খয়রাতিতে রাজকোষ ফাঁকা করে। শাহজাহানের বাহিনী যখন লাগামহীন অত্যাচার নামিয়ে এনেছিল সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রামে, তখন অনেক অঞ্চলই পুরুষ-শূন্য ছিল পরিবারগুলির অনেকে শ্রমিক হয়ে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার জন্য। বহু দিন ধরে সরকারের খাতায় পরিযায়ীর সংখ্যা জানা নেই। অতিমারির সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার দায়িত্বহীন ভাবে হঠাৎ লকডাউন ডাকায় কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল এই শ্রমিকদের, তার প্রত্যক্ষদর্শী আমরা। আবার এখানে কাজ না পেয়ে অতিমারির মধ্যেই ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। এ রাজ্যে গত কয়েক বছরে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, কিন্তু নিয়ম মেনে অবসর নিয়েছেন অনেক শিক্ষক। দিন দিন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সরকারি অফিসে কর্মী নিয়োগ না করে নিয়োগ করা হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক কর্মী। স্কুলগুলি ভরে গিয়েছে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকে। কর্মসংস্থান কোথায় যে ভিন রাজ্যের শ্রমিক এখানে আসবেন? এ রাজ্যে এখন সম্ভাবনা দু’টি— হয় শাসক দলের মদতে পুষ্ট সিন্ডিকেট ব্যবসায় যোগ দেওয়া, না হয় পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে চলে যাওয়া।

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

অসার তথ্য

Advertisement

অভিরূপ সরকার তাঁর প্রবন্ধে মূলত যে দু’টি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চেয়েছেন, তা হল ২০১১ সালের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহির্মুখী অভিবাসন বাড়েনি। বরং অন্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে কাজ করার প্রবণতা বেড়েছে। এই দু’টি পর্যবেক্ষণের সমর্থনে তিনি ২০১১ সালের জনশুমারি থেকে আহৃত তথ্য এবং ২০১২ ও ২০২৩ সালের অসংরক্ষিত দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভ্রমণের একটা তুলনামূলক পরিসংখ্যান পেশ করেছেন।

২০১১ সালে জনশুমারির তথ্যানুসারে, ২৪ লক্ষ মানুষ কাজের তাগিদে রাজ্যের বাইরে গিয়েছেন এবং ৪৪ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে থেকে কাজ করতে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। অর্থাৎ, “২০১১ নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ থেকে যত মানুষ কাজ করতে বাইরে গিয়েছেন, তার তুলনায় ২০ লক্ষ বেশি মানুষ বাইরে থেকে কাজ করতে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন।” ২০১১ সালের পরে যে-হেতু আর জনশুমারি হয়নি, প্রবন্ধকার তাই নির্ভর করেছেন অসংরক্ষিত দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভ্রমণের পরিসংখ্যানের উপর। ২০১২ ও ২০২৩ সালের এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে তুলনামূলক ভাবে তিনি দেখিয়েছেন, সারা দেশে মোট অসংরক্ষিত দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভ্রমণের গন্তব্য পশ্চিমবঙ্গ— এমন যাত্রীর সংখ্যা এই এগারো বছরে ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭.৩৩ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ, ২.৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, বহির্মুখী অভিবাসনের ক্ষেত্রে তিনি নির্দিষ্ট কোনও তথ্য দিতে পারেননি। পরিবর্তে তিনি বলেছেন, অসংরক্ষিত দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভ্রমণের উৎস হিসাবে সারা ভারতের প্রথম দশটা জেলার মধ্যে ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলা ছিল না, ২০২৩-এ মুর্শিদাবাদ আছে। কিন্তু, যে-হেতু জেলা থেকে জেলা ভ্রমণের তালিকায় মুর্শিদাবাদ-কলকাতা ভারতের ব্যস্ততম রুট, তাই ধরে নেওয়া যায় যে, মুর্শিদাবাদ থেকে যাঁরা সফর করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য কলকাতা।

অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে তিনি অনুমানের আশ্রয় নিয়েছেন। ‘অন্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে কাজ করার প্রবণতা বেড়েছে’— এটা বোঝানোর জন্য এক দিকে তিনি ২০১১ সালের জনশুমারির দ্বারস্থ হলেন, এটা জেনেই যে ’১১-র পরে আর জনশুমারি হয়নি আর শেষে উপরোক্ত অনুমানটির আশ্রয় নিলেন। কোনও তুলনামূলক আলোচনা এই উপায়ে কি সঠিক ভাবে করা যায়, না কি কোনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব?

বিভিন্ন কারণে মানুষ এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গমন করেন। কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল অর্থনৈতিক বা কর্মসংস্থান-জনিত সুবিধা, পরিবারের কর্তা বা কর্ত্রীর কর্মক্ষেত্রে বদলি, উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিবাহ ইত্যাদি। এটা ঠিকই, শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই হয়তো অসংরক্ষিত দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন, কিন্তু, স্লিপার ক্লাস বা বাস/ট্রাকের মতো অন্য পরিবহণ ব্যবস্থার শরণাপন্ন হন— এ রকম যাত্রীও তাঁদের মধ্যে কম পাওয়া যাবে না। সুতরাং, শুধুমাত্র অসংরক্ষিত দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভ্রমণের পরিসংখ্যান দিয়ে এই বিষয়ে যে নির্ভরযোগ্য চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়, তা বলা বাহুল্য।

গৌতম নারায়ণ দেব, কলকাতা-৭৪

লুকানোর চেষ্টা

অভিরূপ সরকারের প্রবন্ধটি পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান জীবিকা নির্বাহের প্রেক্ষাপটে মোটেই খাপ খায় না। গভীর বিবেচনায় বরং ‘উলট পুরাণ’ রচনায় তিনি মনোযোগী হয়েছেন বলা যায়। তিনি ২০১১ সালের ভারতের জনশুমারির ভিত্তিতে ২০২৫ সালের কর্মজীবী মানুষের সুলুকসন্ধান করেছেন। ২০১১ সালের পরিসংখ্যানে দক্ষ-অদক্ষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, স্বল্পমেধা-উচ্চমেধা ইত্যাদি নিয়ে যে তথ্য দিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে দ্বিমত নেই। রাজ্য জুড়ে ঠিক কত মানুষ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করছেন, সে হিসাব সম্ভবত কারও কাছেই নেই। এ নিয়ে কেউ গবেষণাপত্রও তৈরি করেনি। তবে লকডাউনের সময় রাজ্যের বাইরে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে ফেরার ভয়াবহতার কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ যে কর্মসংস্থানে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে, তা বিক্ষিপ্ত ভাবে নানা ধরনের আলোচনা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমীক্ষায় উঠে আসছে।

অভিজ্ঞতা বলছে, স্বাবলম্বী হতে বা কাজ করে খেতে ইচ্ছুক মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী ছেলেমেয়েদের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে চলে গিয়েছে। এদের মধ্যে যেমন টেকনিশিয়ান আছে, তেমনই আছে হাসপাতাল, হোটেল, নার্সিং ইত্যাদিতে প্রশিক্ষিতরা। রাজ্যে রয়ে গেছে শুধুমাত্র তিন চাকার ট্রলি ভ্যান, টোটো-অটো চালানো বা রাইস মিলে কাজ করা খুব অল্প সংখ্যক ছেলেমেয়ে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, প্রবন্ধকার খুব যত্ন সহকারে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করেছেন। রাজ্যের কর্মহীনতার হাহাকারকে এত সহজে ঢাকা যাবে না।

মুরারী মণ্ডল, রায়না, পূর্ব বর্ধমান

উপর থেকে নীচে

বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে দু’টি চলমান সিঁড়িই নীচ থেকে উপরে যায়। নিম্নগামী সিঁড়ি না থাকায় ওভারব্রিজ থেকে মালপত্র নিয়ে হেঁটে নামতে হয়। যার ফলে সাধারণ লোক তো বটেই, বয়স্ক ও রোগীরা খুব অসুবিধায় পড়েন। এই বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত উপর থেকে নীচে আসার একটি সিঁড়ির ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করছি।

গৌতম ভট্টাচার্য, কলকাতা-৪৮

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement