— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বৈশাখ, জৈষ্ঠ্যের খর রোদের সঙ্গে যুঝে পেট চালাতে হবে, জেনেই কাজে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু এ গ্রীষ্মের মোকাবিলা দুঃস্বপ্নকেও হার মানাচ্ছে।
বাইপাস লাগোয়া রুবি মোড় তল্লাটে সক্রিয় ডেলিভারি পার্টনার বিগ বাস্কেটের কুণাল প্রামাণিকের মনে হয়, সকাল ১০টার পরে সিগন্যালে দাঁড়ালে রোদটা বিষাক্ত তিরের মতো বেঁধে। আর দু’চাকায় ছুট লাগালে ছোবল মারে লু। দমদম, সিঁথিতে ব্যস্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব অরিন্দম রায় ছাপোষা গৃহস্থ। সুইগির ওই কর্মী বলছেন, “এই গরমে খিদেয় বেলা ১২টার আগেই শরীরটা ছেড়ে দেয়। ঘন ঘন পেটের গোলমালে ভুগি। টেনেটুনে ৫০০ টাকার জন্য ১৩-১৪ ঘণ্টা খাটতে হয়।”
আর একটা শ্রমিক দিবস এই সব হা-ক্লান্ত শরীর আর নিংড়ে নেওয়া বিধ্বস্ত মনে নিছকই আশাহীন কাজ বা জয়হীন চেষ্টার শ্রম। ‘কাজ করলে টাকা, না-করলে নেই’ চুক্তিতেও অনেকেই অসুস্থ হয়ে ছুটি নিচ্ছেন। তবে সুইগি নিখরচার অ্যাম্বুল্যান্সের আশ্বাস দিচ্ছে।
লোকসভা ভোটে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ইস্তাহার এই অনলাইন কর্মীদের নাম নথিভুক্ত করে সরকারি সুবিধার আশ্বাস দিচ্ছে। এই অস্থায়ী শহুরে দিনমজুরদের কাজের সময়ের ঠিক-ঠিকানা বা কাজের নিরাপত্তা নেই। বেশির ভাগই কার্যত ইনসেনটিভ বা বাড়তি উৎসাহ ভাতা পান না। সম্ভবত মুম্বইয়ের বৃষ্টির কথা ভেবেই অনলাইন কর্মীদের জন্য কোনও কোনও সংস্থা উৎসাহ ভাতা দেয়। কলকাতার পশ্চিম এশিয়া ধাঁচের গ্রীষ্মে তেমন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তবে কোনও কোনও কর্মী বলছেন, জোম্যাটো বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ২০ শতাংশ উৎসাহ ভাতা দিচ্ছে।
অনলাইন কর্মীদের অনেককেই ঠা ঠা রোদে অর্ডারের অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ। তবে সুইগির এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা ৩০০টির বেশি রিচার্জ পয়েন্ট চালু করেছি। তাতে মোবাইল রিচার্জ করা এবং বিশ্রামের সুব্যবস্থা রয়েছে। এনার্জি ড্রিঙ্ক গোছের পানীয়ও দেওয়া হয়। অ্যাপের মাধ্যমে তাপপ্রবাহে সাবধানে থাকার নানা পরামর্শও আমরা ডেলিভারি কর্মীদের দিই।”
বাস্তবে এই রিচার্জ পয়েন্টের কার্যকারিতা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। চিনার পার্ক, নিউ টাউন এলাকায় ব্লিংকিটের কর্মী মহিদুল ইসলাম বলছেন, “দিনে অন্তত গোটা ২০ অর্ডার ধরতে চেষ্টা করি। প্রাণপাত করে অনেকে ৩০-৪০টা অর্ডার ধরারও চেষ্টা চালিয়ে যান।” সুইগির দাবি, ডেলিভারি কর্মীদের জন্য আরামদায়ক পোশাক, নিখরচার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন তাঁরা। সিঁথির অরিন্দম কিন্তু বলছেন, “মোটা টেরিলিনের কাপড়ের ইউনিফর্মই পরতে হয়!” কলকাতা ও আশপাশে অন্তত ২০ হাজার ডেলিভারি পার্টনার রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠা একটি মঞ্চ ‘ডেলিভারি ভয়েস’ হাজার পাঁচেক অ্যাপনির্ভর অনলাইন কর্মীকে একজোট করেছে। মে দিবস এবং পরবর্তী সপ্তাহে চাঁদা তুলে তাঁরাই দুপুরের পথচারী বা বাস-ট্যাক্সি চালকদের জল বা ওআরএস দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। এই মঞ্চের তরফে প্রিয়স্মিতা বলছেন, “গরমে কাজ করার ইনসেনটিভ এবং কাজের মানবিক পরিবেশ, দুটোই দরকার। খামতি দুটোতেই রয়েছে।”