কলকাতা মেট্রো। — ফাইল চিত্র।
দেশের প্রথম মেট্রো হওয়া সত্ত্বেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও তা প্রয়োগের নিরিখে কলকাতা মেট্রোকে শত যোজন পিছনে ফেলেছে দিল্লি মেট্রো। সম্প্রতি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বৌবাজারের সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের মোকাবিলায় দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের (ডিএমআরসি) সাহায্য চাওয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মেট্রোপথ নির্মাণের ক্ষেত্রে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করছে ডিএমআরসি। চলতি বছরে মরিশাস, ভিয়েতনাম, আলেকজ়ান্দ্রিয়া, তেল আভিভের মেট্রো প্রকল্পেরও পরামর্শদাতা সংস্থা হিসাবে কাজের আগ্রহ প্রকাশ করে দরপত্র দিয়েছে তারা। উদ্দেশ্য, মেট্রো নির্মাণের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরামর্শদাতা হয়ে আরও রাজস্ব আয় বাড়ানো। ওই পথে হেঁটেই এ বার দু’টি সংস্থার সঙ্গে জোট বেঁধে মেট্রোর আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা তৈরির কাজে হাত দিচ্ছে ডিএমআরসি। সেই উদ্যোগ সফল হলে কলকাতা-সহ দেশের একাধিক মেট্রো প্রকল্পে ওই সিগন্যালিং ও ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োগ হতে পারে। নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর এবং জোকা মেট্রোর জন্য আধুনিক সিগন্যালিং প্রযুক্তির খোঁজ করছেন মেট্রোকর্তারা।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় কম সময়ের ব্যবধানে ট্রেন চালাতে ‘কমিউনিকেশন বেসড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম’ (সিবিটিসি) বসানো হয়েছে। সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত অংশে ওই প্রযুক্তি রয়েছে। এখনও তার নানা ধাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত মেট্রোপথ তৈরি হলে ওই প্রযুক্তিতে দু’টি ট্রেনের ব্যবধান দেড় মিনিট রেখে চালানো যাবে। ইউরোপে ব্যবহৃত এই প্রযুক্তির বিকল্প দেশীয় পদ্ধতি তৈরির কাজেই এখন হাত দিয়েছে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন। এ জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকম এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা ‘বেল কমিউনিকেশন’ ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘সি ড্যাক’-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা। ওই দুই সংস্থার সহযোগিতায় মেট্রো চলাচলের জন্য আধুনিক সিগন্যালিং প্রযুক্তি তৈরি করা হবে। পরিকল্পনা সফল হলে দেশীয় ওই প্রযুক্তি অনেক কম খরচে মিলবে। মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াতে চলতি বছরেই রেল ‘কবচ’ ব্যবস্থা চালু করেছে। দেশীয় প্রযুক্তির ওই ব্যবস্থাও ইউরোপীয় ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সমতুল বলে সূত্রের খবর।
মেট্রো প্রকল্পে একই ভাবে সিবিটিসি প্রযুক্তির ধাঁচে দেশীয় বিকল্প তৈরি করা গেলে তা হবে তাৎপর্যপূর্ণ। একই ভাবে দিল্লি মেট্রোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আয়ের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলেও জানান সংস্থার আধিকারিকেরা। এই মুহূর্তে দেশে ২০টিরও বেশি শহরে মেট্রো প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে ওই প্রযুক্তি তৈরিতে সাফল্য এলে দেশেই তার বিপুল বাজার রয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংস্থার আধিকারিকেরা। প্রসঙ্গত, দিল্লি মেট্রো দেশের মধ্যে প্রথম চালকবিহীন ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে।