বৃদ্ধের মৃত্যু, জানাজানি হল পাঁচ দিন পরে

ওই রাতে পড়শিদের থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। কিন্তু বাইরে থেকে ডাকাডাকি করলেও হাসিরানিদেবী দরজা খোলেননি। শেষে পুলিশ পড়শিদের সাহায্যে দরজা ভেঙে ঢোকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫১
Share:

বাইরে নিয়ে আসা হচ্ছে বৃদ্ধের দেহ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে আছে লম্বা-চওড়া একটি দেহ। গায়ে কোনও পোশাক নেই। পেট ফুলে গিয়েছে। পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে কম্বল জাতীয় কিছু। দু’টি হাত আর মাথা ঝুলছে বিছানার বাইরে। পাশে বসে আছেন শাড়ি-সোয়েটার পরিহিতা এক বয়স্কা মহিলা। হরিদেবপুর থানার সোদপুরের বসুশ্রী বাগানে এক আবাসনের দোতলার ফ্ল্যাট থেকে শনিবার এমন অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল বৃদ্ধ অমর সান্যালের (৮৫) দেহ।

Advertisement

পুলিশ জানায়, উস্তাদ আমির খান সরণির ওই ফ্ল্যাটের মালিক অমরবাবুর মৃত্যু হয়েছে চার-পাঁচ দিন আগে। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পরে পড়শিদের সাহায্য চাওয়া তো দূর, ঘরই খুলছিলেন না স্ত্রী হাসিরানি সান্যাল। পড়শিরা কয়েক দিন অমরবাবুকে দেখতে না পেয়ে এবং পচা গন্ধ পেয়ে পুলিশে জানান।

ওই রাতে পড়শিদের থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। কিন্তু বাইরে থেকে ডাকাডাকি করলেও হাসিরানিদেবী দরজা খোলেননি। শেষে পুলিশ পড়শিদের সাহায্যে দরজা ভেঙে ঢোকে। দেখা যায়, শোয়ার ঘরের বিছানায় পড়ে আছে অমরবাবুর পচাগলা দেহ। আর পাশে বসে কথা বলে চলেছেন হাসিরানিদেবী। পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, অমরবাবুর স্ত্রী মানসিক ভাবে অসুস্থ। বাইরের কারও সঙ্গে খুব একটা কথা বলতেন না। কিন্তু পুলিশ পৌঁছলেও স্বামীর দেহ ছাড়তে রাজি হচ্ছিলেন না হাসিরানিদেবী। একটা সময়ের পরে পুলিশ কার্যত জোর করে ওই বৃদ্ধের দেহ বার করে আনে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, কলকাতা ডক লেবার বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অমরবাবু ও হাসিরানিদেবী নিঃসন্তান। পাশের পাড়ায় তাঁদের বাড়ি ছিল। বছর তিন-চার আগে ওই ফ্ল্যাট কিনে আসেন। অমরবাবু প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিশলেও তাঁর স্ত্রী বেরোতেন না।

শনিবার অমরবাবুর দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর ভাগ্নে সঞ্জিৎ বাগচীকে খবর দিলে তিনি আসেন। কিন্তু মামিমার সঙ্গে কথা বলতে বা ফ্ল্যাটে ঢুকতে রাজি হননি। পরে সঞ্জিৎবাবু বলেন, ‘‘মামা-মামিমা যোগাযোগ রাখা পছন্দ করতেন না বলে আমিও আসতাম না। পুলিশ ডেকেছে বলে এসেছি। কিন্তু মামিমার দায়িত্ব নিতে পারব না।’’ অসহায়, নিঃসন্তান আত্মীয়ের দায়িত্ব এড়ানোর কারণ কী? সঞ্জিৎবাবুর দাবি, ‘‘আমার পক্ষে দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। যা করার, প্রশাসন করবে।’’ মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement