বিক্ষোভ: দমদমের শ্যামনগরে ওই স্কুলে অভিভাবকেরা। নিজস্ব চিত্র
স্কুল কর্তৃপক্ষ চান, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পঠনপাঠনের পরিকাঠামো আরও অত্যাধুনিক হোক। অভিভাবকদের বক্তব্য, পঠনপাঠনের মান বাড়ুক। পরিকাঠামো উন্নতির নামে বিলাসিতার প্রয়োজন নেই। সেশন ফি বৃদ্ধির এমন প্রস্তাব ঘিরে মঙ্গলবার উত্তপ্ত হল দমদমের শ্যামনগর
মোড়ে অবস্থিত একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চত্বর। অভিভাবকদের বিক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত সেশন ফি বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে বাধ্য হলেন বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি অভিভাবকেরা স্কুলের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি পান। যেখানে ‘সমাজের দাবি’ মেনে স্কুলের আধুনিকীকরণ এবং সম্প্রসারণ ঘটানোর কথা বলা হয়। অভিভাবকদের দাবি, স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে কী কী কারণে ‘সমাজের দাবি’ মেনে সেশন ফি বাড়ানো হচ্ছে তার একটি তালিকা দেওয়া ছিল। পাশে লেখা ছিল, ৭১ হাজার টাকা। হোয়াটস্অ্যাপে ওই টাকার অঙ্ক দেখেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন অভিভাবকেরা। এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম, সিসি ক্যামেরা, স্মার্টক্লাস, নতুন বেঞ্চ, অ্যাস্ট্রোটার্ফ, স্বাস্থ্যবিমা-সহ আরও নানা খাতের কথা তালিকায় দেওয়া রয়েছে। নিউ টাউন কিংবা কলকাতার বিলাসবহুল স্কুলের মতো অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা। আমরা তো সে সবের জন্য সন্তানদের এই স্কুলে ভর্তি করাইনি। সেশন ফি ১৫ হাজার থেকে এক লাফে ৫০-৬০ হাজার টাকা বা তার বেশি হলে আমাদের পক্ষে মুশকিল।’’
এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন স্কুলের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অভিষেক মজুমদার। গেট মিটিংয়ের ধাঁচে স্কুল চত্বরে চেয়ারের উপরে দাঁড়িয়ে তিনি অভিভাবকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে অভিভাবকেরা নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিলেন। এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ফি বৃদ্ধির পিছনে কর্তৃপক্ষের ভাবনার কথা যখনই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, হাত নেড়ে তা খারিজ করে দিয়েছেন অভিভাবকেরা। শেষমেশ অভিভাবকদের মাঝে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘বিজ্ঞপ্তি যা দেওয়া হয়েছে তা প্রস্তাব মাত্র। সেটা মানা, প্রত্যাখ্যান করা, আংশিক মানা, সবটা একটা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া ঠিক বা ভুল হতে পারে। আপাতত তা স্থগিত থাকছে। দু’দিন পরে বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ জানাতে পারব।’’ এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের মুখে ‘স্থগিত’ শব্দটিকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান অভিভাবকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘কেউই আন্দোলন করতে আসিনি। স্কুলে পড়ার মান বাড়ুক। কিন্তু এসি ক্লাসরুম, দামি পোশাক-জুতো কে চেয়েছে। সন্তানেরা কোন ব্র্যান্ডের জুতো পরে স্কুলে আসবে তা অভিভাবকেরা ঠিক করবেন।’’
অভিভাবকদের বিক্ষোভকে ‘বিভ্রান্তি’-র বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের। তাঁর কথায়, ‘‘৭১ হাজার টাকা সেশন ফি কোনও ভাবেই করা হয়নি। অন্যান্য স্কুলে কত ফি, তার একটি তুলনামূলক হিসাব বোর্ডে লেখা ছিল। সেটাই অভিভাবকদের হোয়াটস্অ্যাপে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ফি বাড়ানোর একটা পরিকল্পনা ছিল। এ নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে যৌথভাবে আলোচনার ভিত্তিতে চলতে চাই।’’