পাতকুয়োয় ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে চমকে উঠেছিলেন গৃহবধূ। এর মধ্যে শাশুড়ির ‘পড়ে গেল, পড়ে গেল’ চিৎকার শুনে গৃহবধূ ভেবেছিলেন তাঁর বাচ্চা মেয়েটি পড়ে গিয়েছে। আর তাই কোনও দিকে না তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি সোজা পাতকুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য জানা গেল, পাতকুয়োয় পড়ে গিয়েছেন ওই বধূর শ্বশুর। ওই মহিলাকে বাঁচানো গেলেও তিন ঘণ্টা পরে প্রৌঢ়ের দেহ উদ্ধার করে দমকল বাহিনী।
রবিবার বালির রামচন্দ্রপুরের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মন্টু পাল (৬৫) নামে ওই প্রৌঢ়কে উদ্ধারের পরে হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়। তবে তাঁর বৌমা সুজাতা পাল সুস্থ রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, বেশ কয়েক বছর আগে এক কারখানার কর্মী মন্টুবাবু শারীরিক কারণে কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি কিডনির অসুখে ভুগছেন। কয়েক দিন শরীরটা বেশ খারাপ থাকায় মন্টুবাবুকে পাতকুয়োর সামনে যেতে বারণ করেছিলেন বাড়ির লোকেরা। এ দিনও তাঁর স্ত্রী মলিনাদেবী বলেছিলেন পরে স্নান করিয়ে দেবেন। তাই তিনি যেন একা পাতকুয়োর সামনে না যান। কিন্তু সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ বারণ না শুনেই টালির চালের একতলা বাড়ির সামনে থাকা পাতকুয়ো থেকে জল তুলতে যান মন্টুবাবু। আর তখনই পা পিছলে টাল সামলাতে না পেরে পাতকুয়োর উপরে পরে যান ওই প্রৌঢ়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মন্টুবাবুকে এ ভাবে পরে যেতে দেখে ছুটে এসে পা দু’টো জড়িয়েও ধরেছিলেন মলিনাদেবী। কিন্তু লাভ হয়নি। পাতকুয়োয় পড়ে যান ওই প্রৌঢ়। তখনই ‘পড়ে গেল, পড়ে গেল’ করে চিৎকার করে ছেলেকে ডাকতে ছোটেন মন্টুবাবুর স্ত্রী। সেই সময়ে নিজের সাত বছরের মেয়ে পড়ে গিয়েছে ভেবে রান্নাঘর থেকে পড়িমড়ি করে বেরিয়ে আসেন সুজাতাদেবী। কোনও কিছু না দেখে-শুনে তিনি পাতকুয়োতে ঝাঁপ দেন মেয়েকে বাঁচাতে। কিন্তু ততক্ষণে পাতকুয়োর সামনে সকলে এসে দেখেন, নীচে হাবুডুবু খাচ্ছেন সুজাতাদেবী। তাঁর মেয়েও সকলের সঙ্গে তখন পাতকুয়োর সামনেই দাঁড়িয়ে।
স্থানীয়দের চেঁচামেচিতে স্থানীয় কয়েক জন রাজমিস্ত্রি সুজাতাদেবীকে উদ্ধার করতে পাতকুয়োয় নেমে পড়েন। তাঁরাই ওই মহিলাকে তুলে আনেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সোনালি সমাদ্দার। তিনি বলেন, ‘‘মহিলাকে তোলা গেলেও মন্টুবাবু ডুবে গিয়েছিলেন। তাই দমকলকে খবর দেওয়া হয়। দমকল ও বিপর্যয় মোকবিলা দলের কর্মীরা প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় দেহ উদ্ধার করেন।’’