কোয়েল হাজরা হালদার। —ফাইল চিত্র।
এক গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিধাননগর কমিশনারেটের অধীন দত্তাবাদে নিজের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় কোয়েল হাজরা হালদার (১৮) নামে ওই তরুণীর ঝুলন্ত দেহ। তাঁর বাড়ির লোকের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে তাঁদের মেয়েকে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মৃতার স্বামী সঞ্জয় হালদারকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানা। কোয়েলের পরিজনেরা পুলিশের কাছে অভিযোগে আরও জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই তাঁর উপরে পণের দাবিতে অত্যাচার করা হত। তদন্তকারীদের অনুমান, তার জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণী।
বুধবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে তরুণীর দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় দেহ নিয়ে আসা হয় ট্যাংরা থানার ক্রিস্টোফার রোডে কোয়েলের মা-বাবার বাড়িতে। ন্যায্য বিচারের দাবিতে মৃতদেহ নিয়ে ঘণ্টাখানেক পথ অবরোধ করেন তরুণীর পরিজন-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস চারেক আগে দত্তাবাদের বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি সঞ্জয়কে বাড়ির অমতে বিয়ে করেন কোয়েল। তাঁর দাদা অভিষেকের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে তাঁর বোনের উপরে অত্যাচার শুরু করেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। মারধরের পাশাপাশি চলত মানসিক অত্যাচারও।
অভিষেক বলেন, ‘‘মঙ্গলবার আমি বোনকে ফোন করলে ও জানায়, আমাকে কিছু কথা বলার আছে। কিন্তু সেই সময়ে আমার দোকানে লোক চলে আসায় বোনের সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলতে পারিনি।’’ ওই যুবক আরও বলেন, ‘‘এর পরে বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ সঞ্জয়ের ভাই বিজয় আমাকে ফোন করে জানান, বোন আত্মহত্যা করেছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে তাদের কাছে এই ঘটনার খবর আসে। কোয়েলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন তাঁর বাড়ির লোকজন। পরে কোয়েলের বাবা বাবু হাজরা পুলিশের কাছে তাঁর জামাই এবং মেয়ের শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে বিজয় দাবি করেন, কোয়েল কেন এই চরম পথ বেছে নিলেন, তা তিনি জানেন না ।
তিনি বলেন, ‘‘আমি মা-বাবার সঙ্গে একটি ঘরে থাকি। সেখানেই রান্না
হয়। দাদা-বৌদি থাকত অন্য একটি ঘরে। মঙ্গলবার দুপুরে আমি বৌদিকে ফোন করে খেতে ডাকি। বৌদি জানান, তিনি ভিডিয়ো গেম খেলছেন। শেষ করে আসবেন। সেই সময়ে দাদা বাড়ি ছিলেন না। কাছেই রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন। কিছু ক্ষণ পরে ফিরে এসে দাদা আমাকে বলেন, বৌদি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।’’
বিজয়ের আরও দাবি, কোয়েল যে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তা জানতেন না তাঁরা কেউই। হাসপাতালে কোয়েলকে নিয়ে যাওয়ার পরে সে কথা তাঁদের জানান চিকিৎসকেরা। তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালে তাঁকে ও তাঁর মা-বাবাকে মারধর করেন কোয়েলের পরিজনেরা। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তরুণীর দাদা অভিষেক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোবাইলে গেম খেলতে পছন্দ করতেন তরুণী। তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অশান্তি হত। সোমবারও একই কারণে ফের গোলমাল হয় বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তার পরেই ওই ঘটনা। যদিও বিজয়ের দাবি, তাঁর বৌদির ভিডিয়ো গেম খেলার নেশা ছিল ঠিকই। কিন্তু তা নিয়ে বাড়িতে কোনও দিন বড় রকমের অশান্তি হয়নি।
তবে কোয়েলের বাবা, দাদা-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের পাল্টা অভিযোগ, কোয়েলের ভিডিয়ো গেমের কোনও নেশা ছিল না। এই নিয়ে অপপ্রচার করছেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।