লোকাল ট্রেনের কামরা থেকে প্ল্যাটফর্ম প্রায় দেড় ফুট নিচু। তাই নামতে হয় লাফিয়ে বা ট্রেনের দরজায় বসে কোনওক্রমে প্ল্যাটফর্মে পা ঠেকিয়ে। ওঠাও সমস্যার। কোনও প্রত্যন্ত স্টেশন নয়, এই অবস্থা হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের।
যদিও পূর্ব রেল সূত্রের খবর, এই সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। নিত্যযাত্রীরা জানান, এক্সপ্রেস ট্রেনে সিঁড়ি থাকে। তাই সমস্যা হয় না। কিন্তু লোকাল ট্রেনে সিঁড়ি নেই। কিন্তু নিউ কমপ্লেক্সের প্ল্যাটফর্ম প্রায় দেড় ফুট নিচু। তাই ওঠা-নামা করতে খুবই সমস্যা হয়। সমস্যা বেশি হয় মহিলা, বয়স্ক মানুষ এবং ছোটদের। তা ছাড়া সাধারণত লোকাল ট্রেন দাঁড়ানোর পরে হুড়মুড়িয়ে যাত্রীরা ওঠা-নামা করেন। তখন অসাবধান হলে যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
নিত্যযাত্রীরা জানান, হাওড়া রেল স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও হাওড়া খড়্গপুর শাখার আবাদা রেল স্টেশনে একই সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আবাদা-য় যাত্রীর সংখ্যা কম। হাওড়া স্টেশনে মোট ২৩টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ থেকে ২৩ নম্বর পর্যন্ত প্ল্যাটফর্ম নিউ কমপ্লেক্সে। লোকাল ও দূরগামী ট্রেন এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ে। নতুন থেকে পুরনো কমপ্লেক্সে আসার যে ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে সেটি সংকীর্ণ হওয়ায় চলাফেরায় সমস্যা হয় এবং ব্যস্ত সময়ে ফুটওভার ব্রিজটি পেরোতে যথেষ্ট সময় লাগে। তাই যাত্রীরা ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসা মাত্রই দ্রুত নেমে ওই ব্রিজে ওঠার জন্য চেষ্টা করেন। ফলে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। সে সময় অসাবধান হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। মাঝেমধ্যেই এমন ঘটনাও ঘটে। যেমন ঘটেছিল অশোক বিশ্বাসের। তাঁর কথায়: “অফিস টাইমে তাড়াহুড়োয় ভুলে গিয়েছিলাম প্ল্যাটফর্ম এতটা নিচুতে। ঠিক মতো পা ফেলিনি। তাই পা মচকে বেশ কিছু দিন বাড়িতে থাকতে হয়েছিল।”
কয়েক মাস আগে ভিন্ রাজ্যের এক স্টেশনে ট্রেন ও নিচু প্ল্যাটফর্মের মাঝে আটকে গিয়েছিলেন এক মহিলা। তাঁকে বহু কষ্টে উদ্ধার করা গেলেও বাঁচানো যায়নি। বাগনানের বাসিন্দা তরুণ মণ্ডল বলেন, “কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে ব্যবস্থা নিয়ে কোনও লাভ নেই। এই সমস্যা সমাধানে রেলের দ্রুত পদক্ষেপ করা দরকার।” প্রবীণদের সমস্যা আরও বেশি। হাওড়া দিয়ে প্রায়ই যাতায়াত করেন প্রবীণ চন্দ্রাণী রায়। তিনি বলেন, “আমি ভয়ে মহিলা কামরায় উঠতে পারি না। প্ল্যাটফর্ম বেশ নিচুতে। ছেলেরা সাহায্য না করলে নামতে সমস্যা হয়।”
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মটিকে উঁচু করার কাজ শুরু হয়েছে। এর পরে সব প্ল্যাটফর্মই উঁচু করা হবে। আশা করছি এর পরে যাত্রীদের আর অসুবিধা হবে না।”