Duare sarkar

Duare Sarkar: শিক্ষক-পুরকর্মীরা দুয়ারে সরকার প্রকল্পে, ব্যাহত কাজ

পুরসভায় ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রুপে মোট কর্মী রয়েছেন ২৫০০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৮০০ জনকে প্রকল্পের কাজে লাগানোয় বর্তমানে মাত্র ৭০০ জন পুরসভায় কাজ করছেন।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:২১
Share:

প্রতীকী ছবি

কলকাতা পুরসভার স্থায়ী কর্মীর প্রচুর পদ খালি থাকায় কাজের গতি থমকে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে আগেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের কাজে পুরসভার বিশাল সংখ্যক কর্মীদের কাজে লাগানোর বিষয়টি। কলকাতা পুরসভার ‘বি’ এবং ‘সি’ গ্রুপ মিলিয়ে মোট ১৮০০ কর্মীকে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের জন্য তুলে নেওয়ায় পুরসভার কাজ নানা ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। সবচেয়ে করুণ অবস্থা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির। অভিযোগ, প্রায় ৬০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেশির ভাগকেই এই প্রকল্পের কাজে লাগানোয় গত দেড় মাস ধরে মিড-ডে মিল দেওয়াও বন্ধ রয়েছে।

Advertisement

পুরসভায় ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রুপে মোট কর্মী রয়েছেন ২৫০০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৮০০ জনকে প্রকল্পের কাজে লাগানোয় বর্তমানে মাত্র ৭০০ জন পুরসভায় কাজ করছেন। পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শহরে কোথাও নতুন বাড়ি হচ্ছে বলে খবর এলে ওই বাড়ির সম্পত্তিকরের পরিমাণ কত হবে, তা খতিয়ে দেখতে ওই ঠিকানায় ইনস্পেক্টরকে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই ইনস্পেক্টর এখন দুয়ারে সরকারের কাজে যুক্ত থাকায় পুরসভার কাজটা হয়ে উঠছে না।’’ পুরসভার অর্থ ও স্বাস্থ্য দফতর ছাড়া বাকি সমস্ত বিভাগ থেকে প্রকল্পের জন্য কর্মী নেওয়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে। এমনিতেই অতিমারির জন্য পুরসভার কর ও রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ তলানিতে ঠেকেছে। এ বার কর্মীর অভাবে রাজস্ব আদায়ে আরও ভাটা পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও কলকাতা পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘দুয়ারে সরকার প্রকল্পে পুরসভা থেকে কর্মী চলে যাওয়ায় কাজে কোনও বিঘ্ন হচ্ছে না।’’

পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও সরকারি প্রকল্পের কাজে লাগানোয় মিড-ডে মিল পাচ্ছে না পড়ুয়ারা। কলকাতা পুরসভা পরিচালিত ২৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। যার মধ্যে ৫৮টি হিন্দি মাধ্যম। পুরসভার শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে অভিভাবকদের মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিলির পরে আর এই কাজ হয়নি। এমনিতেই করোনার জন্য গত দেড় বছর ধরে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত বিদ্যালয়গুলিতে পঠনপাঠন বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রবল। মিড-ডে মিল বিলির সময়ে অন্তত অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পড়ুয়াদের প্রশ্ন-উত্তর সম্বলিত টাস্ক দেওয়া হত। এক শিক্ষকের অভিযোগ, ‘‘মিড-ডে মিল বিলি করার সময়ে অভিভাবকদের মাধ্যমে পড়ুয়াদের খোঁজখবর রাখা হত। কিন্তু সেটাও বন্ধ। ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কে জানতে পারছি না। অনেকেই হয়তো আর স্কুলে ফিরবে না।’’

Advertisement

পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ছ’হাজার। অভিযোগ, গত এক বছর ধরে শিক্ষকেরা কখনও সোশ্যাল সেক্টর, কখনও দুয়ারে সরকার প্রকল্পে, কখনও বা স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করছেন। উত্তর কলকাতার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের অভিযোগ, ‘‘আমরা শিক্ষাদানের কাজে যুক্ত থাকলেও সেই কাজটাই করতে পারছি না। অভিভাবকদের কেউ কেউ আমাদের কাছে নালিশ করেন, তাঁদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।’’

পুরসভার শিক্ষা দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুলে মিড-ডে মিল শীঘ্রই ফের দেওয়া হবে।’’ শিক্ষকেরাই তো দুয়ারে সরকারের কাজে নিযুক্ত। তা হলে মিড-ডে মিল কারা দেবেন? এই প্রশ্ন করা হলে জবাব মেলেনি। ফোন কেটে দেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement