প্রতীকী ছবি।
এমনিতেই আজকাল আকাশে বাজের ঘনঘটা বেড়েছে। তার মধ্যে বাজ পড়ছে মাথাতেও। গত কয়েক দিনে স্মার্টফোন হাতে অ্যাপ-ক্যাবের সন্ধানে নামা নাগরিকদের এমনই অবস্থা। তাঁদের অভিযোগ, শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলিতে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি ভাড়া দেখাচ্ছে ক্যাব সংস্থাগুলি! শহর লাগোয়া এলাকায় ওই ভাড়াই তিন থেকে চার গুণ বেশি দেখাচ্ছে। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ অনেকেরই!
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গড়িয়া সংলগ্ন ব্রহ্মপুর থেকে চাঁদনি চক পর্যন্ত যেতে ভাড়া দিতে হয় ৩৫০-৪০০ টাকা। অভিযোগ, শুক্রবার শহরের দু’টি ক্যাব সংস্থা সেই ভাড়া দেখিয়েছে যথাক্রমে ৯৭৩ এবং ১১৩৪ টাকা! যা দেখে এক যাত্রীর প্রশ্ন, ‘‘এটা অ্যাপ-ক্যাবের ভাড়া? না কি রেলের বাতানুকূল কামরার?’’
শনিবার সকালে গড়িয়া থেকে মুকুন্দপুরের একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন রেবা সরকার। অন্য সময়ে ১৬০ টাকা ভাড়া হয়। এ দিন কিন্তু তাঁকে দিতে হয়েছে ২৩৬ টাকা। বেহালা, সোনারপুর, নিউ টাউন, বারাসত ও হাওড়ার মতো বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শহরে আসার জন্য ক্যাব ভাড়া নিতে গিয়ে একই ভাবে হয়রান হচ্ছেন মানুষ।
কেন এমন অবস্থা? অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার কর্তারা অবশ্য পরোক্ষে এর দায় চাপাচ্ছেন ক্যাবচালকদের উপরেই। কী ভাবে? তাঁদের বক্তব্য, নাগাড়ে বৃষ্টির মধ্যে চড়া ভাড়ায় বেশি মুনাফার কথা ভেবে রাস্তায় নেমেছিলেন অনেক চালক। কিন্তু বৃষ্টিতে বিকল অনেকেরই গাড়ি। আচমকা বিগড়ে যাওয়া সেই গাড়ির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর ফলে অ্যাপ-ক্যাবের বিপুল আকাল তৈরি হয়েছে শহরে। পরিস্থিতি এমন যে, শুক্র ও শনিবার আকাশ পরিষ্কার থাকলেও ক্যাবের খোঁজে যাত্রীদের মাথায় বাজ পড়া থামেনি।
একটি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার চালক সুজিত কর্মকারের যুক্তি, ‘‘শহরের অনেক গলিপথেই গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত জল রয়েছে। একটু ঝুঁকি নিয়ে ওই সব রাস্তায় গেলেই গাড়ির সেলফ স্টার্ট এবং গিয়ার বক্সে সমস্যা হচ্ছে। খারাপ হলে মেরামতির পিছনে হাজার পাঁচেক টাকার ধাক্কা। আমিও এমন সমস্যায় পড়েছি। তাই অনেকেই গাড়ি বার করতে ভয় পাচ্ছে।’’
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গাড়ির সংখ্যা কমে গিয়েছে। গাড়ি খারাপ হওয়ার পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া চালকের সংখ্যাও বাড়ছে। যাঁরা ডিউটি করছেন, তাঁরা মূল বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যেই কাজ করতে চাইছেন। এই সব কারণেই ভাড়ার হার ঊর্ধ্বমুখী।’’ অন্য দিকে, অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা ‘রাইড’-এ সার্জ নেই ঠিকই। কিন্তু সেই অ্যাপ ব্যবহার করেও যাত্রীদের সুরাহা মিলছে না বলে অভিযোগ। ওই ক্যাব সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, কয়েক দিন ধরে সেখানেও চালকের আকাল চলেছে। ফলে বহু এলাকায় ক্যাব নেই।