থমকে: নাগরিক মিছিলের জেরে যানজট। বৃহস্পতিবার, মৌলালি মোড়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
একাধিক মিছিল, সমাবেশ, অবরোধ। এই ত্রিফলার জেরে বৃহস্পতিবার, সপ্তাহের চতুর্থ দিনেও যানজট থেকে মুক্তি পেল না শহরের বড় অংশ। হয়রানি হল সাধারণ মানুষের। সপ্তাহের প্রথম তিন দিন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় মিছিল করেছিল তৃণমূল। তখনও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল নাগরিকদের। তার জের চলল এ দিনও। সঙ্গে যোগ হল অরাজনৈতিক মিছিল-সহ বামপন্থী এবং তাদের সহযোগী ১৭টি দল ও কংগ্রেসের মিছিল। প্রতিটি মিছিলেরই দাবি ছিল এক।
যদিও সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ এই দুর্ভোগের পরেও অসহিষ্ণু হননি। ট্র্যাফিক পুলিশের দাবি, এ দিন মিছিল চলাকালীন গাড়ি ঘুরিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
লালবাজার জানিয়েছে, এ দিন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে প্রতিবাদসভার ডাক দিয়েছিল শাসক দল। ওই সভার জন্য বেলা ১২টার পরে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের তিনটি রাস্তাই বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী কিছু বাসকে নিউ রোড দিয়ে, কয়েকটিকে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, এ দিনের সব চেয়ে বড় মিছিলটি ছিল অরাজনৈতিক ব্যানারে। যা শুরু হয় রামলীলা ময়দান থেকে। মিছিলে অংশ নিতে লোকজন ১২টার আগে থেকে জড়ো হতে শুরু করেন। তখন থেকেই গাড়ির গতি শ্লথ হতে শুরু করে সিআইটি রোডে। পরে মিছিলটি মৌলালি হয়ে ধর্মতলার দিকে যাওয়ার সময়ে নিউ মার্কেট থানার কাছে পথ আটকায় পুলিশ। সেখানেই অবস্থানে বসেন মিছিলে অংশ নেওয়া প্রতিবাদীরা।
দুপুর দুটো থেকে দু’ঘণ্টা ওই মিছিল এস এন ব্যানার্জি রোডে থাকায় বন্ধ হয়ে যায় ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল। সে সময়ে মৌলালি থেকে এ জে সি বসু রোড ও মহাত্মা গাঁধী রোডের দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে অবস্থা সামাল দেয় পুলিশ। অন্য দিকে, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড দিয়ে আসা গাড়িগুলিকে গণেশ অ্যাভিনিউয়ে পাঠানো হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, এই অবরোধের জন্য রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূলের সভায় যোগ দিতে আসা বাইক মিছিলকে আইন ভেঙে লেনিন সরণি দিয়ে পাঠানো হয়। সে সময়ে লেনিন সরণি দিয়ে মৌলালির দিকে গাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও যান নিয়ন্ত্রণ করে উল্টো দিকে পাঠানো হয় বাইক মিছিলকে।
পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, এস এন ব্যানার্জি রোড স্বাভাবিক হতে শুরু করতেই ধর্মতলার মোড় অবরোধ করেন নতুন আইনের বিরোধী একদল ছাত্র। যদিও তা বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এরই মধ্যে রামলীলা ময়দান থেকে পার্ক সার্কাসের উদ্দেশ্যে মিছিল শুরু করে ১৭টি বামপন্থী ও তাদের সহযোগী দল। এর জেরে বিকেলে ফের আটকে পড়ে এ জে সি বসু রোড এবং পার্ক স্ট্রিট। গাড়ির গতি বাধা পায় পার্ক সার্কাস মোড়েও। পুলিশের দাবি, সাড়ে পাঁচটার পরে যান চলাচল পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। তবে অবস্থা পুরো স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।
লালবাজার জানিয়েছে, অবরোধ-মিছিলের প্রভাব সব চেয়ে বেশি পড়েছে দক্ষিণ, মধ্য এবং পূর্ব কলকাতায়। মাঝখানে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে থেকে রামমন্দির পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেসের মিছিলের জন্যও বাধা পায় গাড়ির গতি। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ দিন মিছিলের সময়ে গাড়ি ঘুরিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়া হয়েছে।’’