শো-কজ়ের চিঠি পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ফাইল চিত্র।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মেটানোর দাবিতে গত ১০ মার্চ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’। ওই দিন যে সমস্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী স্কুলে যাননি, শিক্ষা দফতর তাঁদের ইতিমধ্যেই শো-কজ়ের চিঠি পাঠিয়েছে। এ বার বিতর্ক শো-কজ়ের চিঠি পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা নিয়ে। অভিযোগ, যাঁরা ওই দিন কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা সকলে শো-কজ়ের চিঠি পাননি।
যাঁরা শো-কজ়ের চিঠি পেলেন, তাঁদের কারও কারও প্রশ্ন, একই কাজের পৃথক ‘শাস্তি’ কেন?
চিঠিতে বলা হয়েছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আগেই একটি নোটিস দিয়ে জানিয়েছিল, বিশেষ কারণ ছাড়া ওই দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকা যাবে না। সে দিন যাঁরা স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সাত দিনের মধ্যে তার কারণ দেখিয়ে জানাতে হবে। ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা না জানালে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলকাতা জেলা শিক্ষা দফতর পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছে, ৭৬৬ জনকে শো-কজ়ের চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কলকাতায় বেশির ভাগ শিক্ষকই ওই দিন স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। কর্মবিরতি পালন করেননি। তাই সংখ্যাটা এত কম।’’ এই সংখ্যা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। শিক্ষকদের একাংশের মতে, সে দিন ৭৬৬ জনেরও বেশি সংখ্যক শিক্ষক স্কুলে না গিয়ে কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলে না আসা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর যথাযথ সংখ্যা কলকাতা জেলা শিক্ষা দফতর জানাচ্ছে না।
শিক্ষকদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, ১০ মার্চ স্কুলে আসেননি যাঁরা, গুগল শিটে তাঁদের নাম লিখে শিক্ষা দফতর পাঠাতে বলেছিল। সে দিন যাঁরা স্কুলে আসেননি, গুগল শিটে তাঁদের নাম লিখে শিক্ষা দফতরকে পাঠিয়েওছেন কোনও কোনও প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকদের একাংশের মতে, যে সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা গুগল শিটে ওই দিন অনুপস্থিত শিক্ষকদের নাম পাঠিয়েছেন, শুধু তাঁরাই শো-কজ়ের চিঠি পেয়েছেন। কিন্তু অনেক প্রধান শিক্ষক গুগল শিটে নামই লিখে পাঠাননি।
কসবার চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার স্কুলে যে ক’জন শিক্ষক সে দিন অনুপস্থিত থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন, তাঁদের নাম আমি গুগল শিটে লিখে দিয়েছিলাম। তাঁরা শো-কজ়ের চিঠিও পেয়েছেন।’’ কয়েক জন প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, তাঁরা এমন কয়েকটি স্কুলের কথা জানেন, যেখানে প্রধান শিক্ষক এবং সমস্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী কর্মবিরতি পালন করেছেন। ফলে, স্কুলে পঠনপাঠনই হয়নি। কিন্তু, সেখানে গুগল শিটে প্রধান শিক্ষক কিছু লেখেননি বলে সেই স্কুলের কেউই শো-কজ়ের চিঠি পাননি।
এই অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ মিলেছে শহরেরই একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের অনেক শিক্ষকই সে দিন কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছিলেন। এ দিকে, শিক্ষা দফতর জানিয়েছিল, সে দিনই বিকেল সাড়ে তিনটের মধ্যে গুগল শিটে নাম পাঠাতে হবে। কিন্তু আমি-সহ অনেকেই কর্মবিরতি পালন করতে চলে যাওয়ায় নাম পাঠানো হয়নি। এর পরে দফতর থেকে আর না চাওয়ায় নাম পাঠাইনি।’’
কলকাতা শিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘যে তালিকা প্রকাশ করেছি, তা যথাযথ। গুগল শিট ছাড়াও পরবর্তীকালে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তালিকা প্রকাশ করেছি।’’
এই চিঠিকে শিক্ষকেরা ভয় পাচ্ছেন না বলে দাবি ‘শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর। তিনি বলেন, ‘‘শো-কজ়ের উত্তর শিক্ষকেরা দিতে শুরু করেছেন। শিক্ষা দফতর কোনও ব্যবস্থা নিলে আইনি পথে কী ভাবে তার মোকাবিলা করা যায়, আমরা তা দেখে উত্তর দেব।’’