—ফাইল চিত্র।
ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কমই হোক বা বেশি, সঙ্গে রয়েছে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। আর তাতেই ফের প্রচুর বই ভিজে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কলেজ স্ট্রিট পাড়ার প্রকাশক ও বই বিক্রেতারা।
গত বার আমপানের তাণ্ডবে কয়েক কোটি টাকার বই জলে ভিজে নষ্ট হয়েছিল। এই বছর ঝড়ের আভাস পেয়ে তাই অনেকটাই সতর্ক বইপাড়ার ব্যবসায়ীরা। অনেকেই ইতিমধ্যে কিছু বই সরিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু প্রকাশক ও বই বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ভারী বর্ষণ হলে বই নষ্ট হওয়ায় আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।
প্রশাসনিক কড়াকড়ির মধ্যেই অনেক প্রকাশক ও বই বিক্রেতা এসে তাঁদের দোকানে ও অফিসে আলমারির নীচের তাকে থাকা বই উপরে তুলে দিয়েছেন। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমপানে আমার প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার বই নষ্ট হয়েছিল। বই সরানোর সুযোগই পাইনি। এ বার তাই আগেভাগেই একতলার অফিসে যত বইয়ের আলমারি রয়েছে,
সেগুলির নীচের তাক থেকে বই সরিয়ে ফেলেছি। আশা করছি, এক কোমর পর্যন্ত জল উঠলেও বই ভিজবে না। তবে কতটা বৃষ্টি হবে, তো বুঝতে পারছি না। তাই একটা ভয় থেকেই যাচ্ছে।’’
বইপাড়ার আর এক প্রকাশক তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রকাশক সভার সহ-সভাপতি পঙ্কজকুমার বসাক জানালেন, বই শুধু প্রকাশকদের কাছেই থাকে না। অনেক প্রকাশনা সংস্থার প্রচুর বই থাকে বাঁধাইওয়ালাদের কাছে। পঙ্কজবাবু বলেন, ‘‘বৈঠকখানা রোড, পাটোয়ারবাগান লেনে ছোট ছোট ঘুপচি ঘরে বই বাঁধানোর দোকান রয়েছে। সেখানে বই ডাঁই হয়ে পড়ে থাকে। সেগুলি সরানোর তো কোনও জায়গা নেই। ফলে ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হলে ওই সব বই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’
শুধু বড় দোকান বা প্রকাশনা সংস্থাই নয়, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বা হিন্দু স্কুলের ফুটপাতে রয়েছে ছোটখাটো অসংখ্য বইয়ের দোকান। বুলবুল ইসলাম নামে এক প্রকাশক জানালেন, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকের বস্তা নীচে রেখে তার উপরে বই রেখে যদি জলরোধক প্লাস্টিক দিয়ে পুরোটা মুড়ে দেওয়া যায়, কিছু বই বাঁচানো যেতে পারে। তবে এই ঝড় ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসে সব চেয়ে ভয়ে রয়েছেন ছোট প্রকাশক ও বিক্রেতারা। তাঁরা কোথায় বই সরাবেন?
এমনই একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থার মালিক বললেন, ‘‘যাঁদের বাড়ি কলেজ স্ট্রিটের কাছাকাছি, তাঁরা কেউ কেউ কিছু বই বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখেছেন। অনেকে বই সরিয়ে রেখেছেন আশপাশের বড় প্রকাশকের অফিসে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুব কম। যাঁদের দূরে বাড়ি, বাস-ট্রেন বন্ধ থাকায় তাঁরা অনেকেই আসতে পারেননি। তাঁদের বই দোকানেই থেকে গিয়েছে।’’ বইপাড়ার এক প্রকাশক তথা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, ‘‘এ বার তা-ও কিছু বই সরিয়ে ফেলেছি। কিন্তু সেটাও পর্যাপ্ত নয়। ভারী বৃষ্টি হলে যে কী হবে, সেই আশঙ্কায় রয়েছি।’’