Cyclone Amphan

ফণীর মতো এই অন্ধকারেও ভরসা শহরের মোমবাতি

মোমবাতির মরসুম না হলেও অস্বাভাবিক চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু  লকডাউনের পরিস্থিতিতে সেই চাহিদা কতটা মেটানো যাবে, বলা কঠিন, বলছেন মোমবাতি উৎপাদনকারীরা।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০৪:৫৪
Share:

চাহিদা: আমপানের দাপটে বুধবার বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে শহরের বহু এলাকা। মোমবাতি জ্বালিয়েই বসে ছিলেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

ফণীর দুর্যোগে নেমে আসা ওড়িশার অন্ধকার কিছুটা কাটিয়েছিল কলকাতার মোমবাতি। সেই সময়ে এই শহর থেকে প্রায় সাত লক্ষ মোমবাতি ভুবনেশ্বর, পুরী-সহ ফণীধ্বস্ত ওড়িশার বহু জায়গায় সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু আমপানের ভ্রুকুটির সামনে শহরের মোমবাতি জ্বলে উঠতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে প্রস্তুতকারীরাই।

Advertisement

কারণ, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে লকডাউন চলায় মোমবাতি উৎপাদন বন্ধ। তবু গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ২৬-২৭ লক্ষ টাকার মোমবাতি বিক্রি হয়েছে বলে জানাচ্ছে প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সংগঠন। মোমবাতি প্রস্তুতকারীদের অন্যতম সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্যান্ডেল অ্যাসোসিয়েশন’ জানাচ্ছে, আরও বরাত আসছে, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেই চাহিদা সামলানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে তারা।

সংগঠনের সম্পাদক সমীর দে জানাচ্ছেন, লকডাউনের ফলে কর্মীরা কাজে আসতে পারছেন না। আর যে অল্প কয়েক জন কর্মী কারখানায় আছেন, তাঁরাও মোমবাতি তৈরির মূল উপাদান প্যারাফিন ওয়াক্সের অভাবে কাজ করতে পারছেন না। ফলে অনেক দিন ধরেই মোমবাতির স্বাভাবিক উৎপাদন বন্ধ। এখন সরবরাহ করা মোমবাতির সবটাই যাচ্ছে মজুত থেকে। সমীরবাবুর কথায়, ‘‘অনবরত ফোন আসছে মোমবাতির জন্য। ঘূর্ণিঝড়ে লোডশেডিং হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং কবে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, এ সব দুশ্চিন্তা থেকেই অনেকে চাইছেন মোমবাতি রাখতে। ফলে মোমবাতির মরসুম না হলেও অস্বাভাবিক চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের পরিস্থিতিতে সেই চাহিদা কতটা মেটানো যাবে, বলা কঠিন।’’

Advertisement

সংগঠন সূত্রের খবর, কলকাতায় মোমবাতি প্রস্তুতকারী ইউনিটের সংখ্যা প্রায় দেড়শো। সেখানে সারা রাজ্যে ওই সংখ্যা আটশোর মতো। সমস্যা সর্বত্র একই। শহরের অন্য এক মোমবাতি প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্ণধারের কথায়, ‘‘মোমবাতি যাঁরা তৈরি করেন,

তাঁরা মূলত বাগনান, উলুবেড়িয়া-সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। ট্রেন-বাস বন্ধ থাকায় তাঁরা কাজে না আসায় মোমবাতিও তৈরি হচ্ছে না।’’ প্রস্তুতকারীরা জানাচ্ছেন, জরুরি সময়ে আট ইঞ্চির মোমবাতির সব থেকে বেশি চাহিদা থাকে। সেগুলি খুচরো বিক্রি হয় পাঁচ টাকা দরে। এক প্যাকেট বিক্রি হয় গড়ে ২৬-২৭ টাকায়। গত দু’দিনেও সেই দামেই বিক্রি হয়েছে।

সংগঠন সূত্রের খবর, প্যারাফিন ওয়াক্সই নয়, মোমবাতি তৈরির জন্য যে সুতোর প্রয়োজন, তারও ঘাটতি রয়েছে। কারণ, বড়বাজারে যে সব দোকানে এই সুতো বিক্রি হয়, লকডাউনে বন্ধ সে সব। এক মোমবাতি প্রস্তুতকারকের কথায়, ‘‘যে বাক্সে মোমবাতি থাকে, ঘাটতি রয়েছে তারও। কারখানা বন্ধ থাকায় ওই বাক্স তৈরিও এখন বন্ধ। সব মিলিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।’’

প্রস্তুতকারী সংস্থার মালিকেরা হিসেব করে দেখেছেন, সব মিলিয়ে শহরে এখনও প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মোমবাতির প্যাকেট মজুত রয়েছে। সারা রাজ্যে রয়েছে ১০ লক্ষের মতো। ফলে তা দিয়ে আরও কয়েকটি দিন চালানো যাবে। সমীরবাবুর কথায়, ‘‘আশা করছি তার আগেই এই বিপর্যয় কাটবে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে যদি বিদ্যুৎ সরবরাহের অস্বাভাবিক ক্ষতি হয়, তখন নতুন করে ভাবতেই হবে। কারণ, মানুষকে তো আর অন্ধকারে রাখা যাবে না! ফণীর অন্ধকার এ শহরের মোমবাতিতে কেটেছে, আমপানের অন্ধকারও কাটাতে পারব বলেই বিশ্বাস।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement