প্রতীকী ছবি।
প্রতি বর্ষায় নিকাশি নালা অবরুদ্ধ হওয়ার পিছনে বা শহর জলমগ্ন হওয়ার জন্য প্লাস্টিককে দায়ী করেন পরিবেশবিদেরা। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে একাধিক বার অভিযান চালানো হলেও বা কড়া পদক্ষেপ করার কথা বলা হলেও আখেরে কার্যত কিছুই হয় না বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের দশটি জায়গায় বসানো হচ্ছে প্লাস্টিক ক্রাশার। ইতিমধ্যেই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে এই যন্ত্র বসানোর ছাড়পত্র মিলেছে। খুব শীঘ্রই লালবাজারে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের মূল ভবন, ট্র্যাফিক ট্রেনিং স্কুল, ডিসি (ট্র্যাফিক) সাউথ-এর অফিস সহ সাতটি গার্ডে তা বসানো হবে।
লালবাজার সূত্রের খবর, প্লাস্টিক ক্রাশার বসানোর জন্য ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে রাজ্য পরিবেশ দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ওই প্রস্তাবে লালবাজার ছাড়া শহরের প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ড অর্থাৎ মোট ২৮টি জায়গায় এই যন্ত্র বসানোর কথা বলা হয়েছিল। আপাতত ১০টি জায়গায় তা বসানোর ছাড়পত্র মিলেছে। অফিসে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, থালা, চামচ, বাটি, চায়ের কাপের মতো জিনিস এই যন্ত্রে গুঁড়ো হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলি পুনর্ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাবে প্লাস্টিকের জিনিস প্রস্তুতকারী কোনও সংস্থা। তবে কোন সংস্থা তা সংগ্রহ করবে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি।
ট্র্যাফিক পুলিশের একটি অংশ জানাচ্ছে, অনেকেই জল বা ঠান্ডা পানীয় খেয়ে প্লাস্টিকের বোতল যত্রতত্র ফেলে দেন। আবার প্লাস্টিকের চায়ের কাপ বা থালা ব্যবহার করার পরে অফিসের বিভিন্ন জায়গায় তা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকত। পরের দিন সাফাইকর্মীরা সেগুলি একটি জায়গায় জড়ো করে সরিয়ে নিয়ে যেতেন। ক্রাশার বসানো হলে এই ধরনের বোতল বা প্লাস্টিকের জিনিস ওই যন্ত্রে গুঁড়ো হয়ে মেশিনের মধ্যেই থেকে যাবে। পুলিশের দাবি, এর ফলে প্লাস্টিকের বোতল বা চায়ের কাপে অফিস নোংরা হওয়ার সম্ভাবনা যেমন কমবে, তেমনই এই বর্জ্যের জেরে নিকাশি নালার মুখ আটকানোও ঠেকানো যাবে।
ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, প্লাস্টিক ক্রাশার বসানোর পরে সবাই যাতে ব্যবহার করা প্লাস্টিকের বোতল বা চায়ের কাপ শুধুমাত্র ওই যন্ত্রে ফেলেন, তার জন্য তাঁদের অনুরোধ করা হবে। আপাতত ১০টি জায়গায় এই ক্রাশার বসানো হলেও আগামী দিনে ট্র্যাফিক বিভাগের সর্বত্র তা বসানোর চেষ্টা করা হবে।
পরিবেশবিদদের অনেকে বলছেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে সরকারি-বেসরকারি অফিসে এমন যন্ত্র বসানো থাকে। বহু ক্ষেত্রে সেটি বাধ্যতামূলক নিয়ম হিসেবে গণ্য করা হয়। এ রাজ্যে এবং দেশেও সরকারি এবং বড় মাপের বেসরকারি অফিসে এমন নিয়ম চালু হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি পুরসভাগুলিকেও এমন যন্ত্র বসানোর জন্য উদ্যোগী হতে হবে।