Bowbazar

Bowbazar: ফাটল বাড়তে দেখেই নথি, ওষুধের খোঁজ ঘরছাড়াদের

বৌবাজারের ভাঙা মহল্লায় আতঙ্কিত ঘরছাড়াদের এমনই ভিড় দেখা গেল শুক্রবার দিনভর। কেউ জরুরি কাগজপত্র নিতে এসেছেন, কেউ এসেছেন ফেলে যাওয়া আসবাব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২২ ০৬:২৩
Share:

ফাইল চিত্র।

দুপুর-রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দরদর করে ঘামছেন প্রৌঢ়া। মুখে এসে পড়েছে রোদ। শাড়ির আঁচল দিয়ে মাঝেমধ্যে মুখ মুছছেন, আর ভয়ার্ত চোখে চার দিকে দেখছেন। প্রায় কাহিল চোখমুখেও আশপাশের পুরনো বাড়ির ছায়ায় সরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন না তিনি। ছায়ায় দাঁড়ান..! কথাটা শুনেই প্রৌঢ়া বললেন, ‘‘ভয় করছে। যদি ভেঙে পড়ে! বাড়িগুলোর যা অবস্থা, তাতে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে কে জানে! গত রাতের ফাটল আরও বড় হয়েছে। ঘর ফাঁকা করার সময়ে জরুরি কিছু কাগজ নিতে পারিনি। সেগুলি নিয়েই বেরিয়ে যাব।’’

Advertisement

বৌবাজারের ভাঙা মহল্লায় আতঙ্কিত ঘরছাড়াদের এমনই ভিড় দেখা গেল শুক্রবার দিনভর। কেউ জরুরি কাগজপত্র নিতে এসেছেন, কেউ এসেছেন ফেলে যাওয়া আসবাব এবং টাকা-গয়না নিয়ে যেতে। কারও কারও আবার দাবি, জমি ছেড়ে গেলে কী হবে, বলা যাচ্ছে না। তাই কাজ থেকে ছুটি নিয়েই চলে এসেছেন ফাটল ধরা বাড়ি পাহারা দিতে। এরই মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে দুর্গা পিতুরি লেনের পাশে সেকরাপাড়া লেনের দু’টি বাড়ি ফাঁকা করায়। সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি, ওই দু’টি বাড়িতেও নাকি ফাটল দেখা গিয়েছে। একই ভাবে ফাটলের আকার আরও বড় হওয়ার অভিযোগ এসেছে দুর্গা পিতুরি লেনের একাধিক বাড়ি থেকে। দেখা গেল, অধিকাংশ পুরনো বাড়ির গায়েই ফাটল বেড়েছে। দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেনের মাঝে এক জায়গায় আবার রাস্তার খানিকটা বসেও গিয়েছে।

রোদে দাঁড়ানো ওই প্রৌঢ়া জানালেন, আতঙ্ক নিয়েই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা বাড়ি আঁকড়ে ছিলেন। তার পরে পুলিশ এসে বাড়ি ফাঁকা করে দিতে বলে। প্রৌঢ়ার দাবি, বাড়ির ছাদের ফাটল ক্রমশ বাড়তে থাকায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ঘর ছাড়েন তিনি। হোটেলে জায়গা পেলেও মেয়েকে কাজে যেতে হয়েছে এ দিন। তাই আতঙ্ক নিয়েই প্রৌঢ়াকে ভাঙা মহল্লায় আসতে হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আগের বার হোটেলে থাকার সময়ে আমার স্বামী ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করতে পারেননি। কোনও মতে দিনগুলো কাটিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে আসার কিছু দিনের মধ্যেই হৃদ্‌রোগে মারা যান তিনি। আবার এই
হোটেল-পর্বের শেষে কী অপেক্ষা করছে জানি না।’’ একই দাবি ওই প্রৌঢ়ার এক প্রতিবেশীর। তাঁদের বাড়িতে এ দিন নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। পুলিশকে জানিয়ে তাঁরা নিজেরাই জায়গা ফাঁকা করে দিয়েছেন। ওই পড়শির কথায়, ‘‘এর শেষ কোথায়, কে জানে। বাড়ি তৈরি করে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে ফিরে আসতে চাই না।’’

Advertisement

দুর্গা পিতুরি লেনের মুখেই নিজের অফিস করেছেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। তিনি বললেন, ‘‘বার বার একই ঘটনা ঘটলে আতঙ্ক বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।’’

পাশেই দেখা গেল, রোদের মধ্যে কিছু খুঁজছে স্কুলের পোশাকে থাকা এক কিশোরী। অংশিকা পাণ্ডে নামে ওই স্কুলপড়ুয়া বলে, ‘‘আইএসসি-র কেমিস্ট্রি পরীক্ষা ছিল আজ। বাড়িতে ফাটল ধরায় বৃহস্পতিবার রাতেই হোটেলে উঠতে হয়েছে। রাত জেগে পড়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছি। তার পরেই আবার এখানে আসতে হয়েছে মায়ের ওষুধ খুঁজতে। বাবা অনলাইনে অর্ডার দিয়েছিল। দেখাচ্ছে, ডেলিভারি হয়ে গিয়েছে। ভাঙা বাড়ির মাঝে কোথায় ওষুধ দিয়ে গিয়েছে কে জানে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement