Coronavirus in Kolkata

Coronavirus in Kolkata: করোনা-কাঁপন হাসপাতালেও, সঙ্কটে পরিষেবা

প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই দাবি, তাঁরা নিজেদের মতো করে পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:১৪
Share:

ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ। সেই সঙ্গেই হাসপাতালে বাড়ছে কোভিড রোগীর ভর্তি হওয়ার সংখ্যা। বৃহস্পতিবার। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।

সুস্থ থাকতে যাঁদের উপরে ভরসা করতে হয়, তাঁরাই একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন!

Advertisement

অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে শহরের প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত। সামনের সারির করোনা যোদ্ধারা এ ভাবে পরপর অসুস্থ হয়ে পড়ায় শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে পরিষেবা কী ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়েই এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। চিকিৎসকের সংখ্যা হঠাৎ কমতে শুরু করায় কিছুটা হলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা।

তবে, প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই দাবি, তাঁরা নিজেদের মতো করে পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে পড়ুয়া, জুনিয়র চিকিৎসক থেকে শিক্ষক-চিকিৎসক— অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। লাফিয়ে বাড়ছে সেই সংখ্যা। আজ যে হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০, পরের দিনই সেখানে হয়তো আক্রান্ত ২০০ পেরিয়ে যাচ্ছে। ‘রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’র অধিকর্তা-চিকিৎসক অসীম ঘোষের কথায়, “বহির্বিভাগে রোগী দেখা কিংবা ভর্তি নেওয়া বন্ধ করার বিষয়ে সরকারের তরফে তো কোনও নির্দেশিকা আসেনি। তাই পরিষেবা চালিয়ে যেতেই হবে। আমরা যাঁরা এখনও সুস্থ রয়েছি, সকলকে মিলিত ভাবে রোগী-পরিষেবা দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে।” কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ওই প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ চোখের চিকিৎসা করাতে আসেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে করোনা আক্রান্ত প্রায় ৫০ জন।

Advertisement

করোনার হামলায় বেসামাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজও। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে মোট যত জন আছেন, তাঁদের ৫০ শতাংশকে নিয়েই পরিষেবা সচল রাখতে হচ্ছে বলে জানালেন অধ্যক্ষ-চিকিৎসক রঘুনাথ মিশ্র। তিনি বলেন, “এক-এক জনকে দু’জনের কাজ করতে হচ্ছে। যাঁদের উপসর্গ নেই, তাঁদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে তাড়াতাড়ি কাজে যোগ দিতে বলা হচ্ছে।” সূত্রের খবর, শহরের ওই মেডিক্যাল কলেজে প্রায় ২০০ জনের উপরে আক্রান্ত। আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ায় মাসকয়েক আগে কোভিড-শয্যা কমানো হয়েছিল। পুনরায় সেই সমস্ত শয্যা ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। এর ফলে পূর্ব-নির্দিষ্ট বেশ কিছু অস্ত্রোপচার আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের সহযোগিতা চেয়েও আবেদন জানানো হবে বলে জানাচ্ছেন রঘুনাথবাবু।

একই ভাবে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায় বললেন, “কর্মীদের সকলকেই অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে হচ্ছে। পরিষেবা চালু রাখতে হলে এ ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।” ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আবার ১৯০ জন আক্রান্ত আগেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যাটি ২৯০ হয়েছে। কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও প্রায় ১০০ জন করোনায় আক্রান্ত। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অধিকাংশই আক্রান্ত হওয়ায় ইতিমধ্যেই বহির্বিভাগে রোগী দেখা এবং ভর্তি নিয়ন্ত্রণ করেছে চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতাল। একই ভাবে পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার, শিক্ষক-চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী মিলিয়ে প্রায় ৫০ জন করোনায় আক্রান্ত এসএসকেএম হাসপাতালে। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, যে সমস্ত চিকিৎসক সুস্থ রয়েছেন, তাঁদের ডিউটি রস্টার তৈরি করা হয়েছে। রাখা থাকছে ‘ব্যাক-আপ’ দলও। এক কর্তার কথায়, “অন্যান্য রোগের পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে করোনার পরিষেবাও যাতে ব্যাহত না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে।”

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষেরও। হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে বহু ক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাঁদের। কিছু ক্ষেত্রে পরিষেবা না পেয়ে ফিরেও যেতে হচ্ছে। এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “পরিষেবা সচল রাখতেই উপসর্গহীনদের বলা হয়েছে, তাঁরা যেন পাঁচ দিনের মাথায় আরও এক বার পরীক্ষা করিয়ে নেন। তাতে নেগেটিভ এলে তাঁরা কাজে যোগ দিতে পারবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement