ফাইল চিত্র।
সংস্কারের কাজের সময়ে ভাঙাচোরা নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার জন্য যে গাড়ি ব্যবহার করা হত, তাতেই একাধিক বার পাচার করার চেষ্টা হয়েছিল দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী। বিষয়টি চোখে পড়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে তা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। ভারতীয় জাদুঘরের সংস্কার ও আধুনিকীকরণের কাজ চলাকালীন দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী খোয়া যাওয়া বা নষ্ট হওয়া প্রসঙ্গে এমনটাই জানাচ্ছে সংস্কারের কাজে সে সময়ে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা এনবিসিসি (ইন্ডিয়া) লিমিটেড। সংস্থা সূত্রে এ-ও জানানো হয়েছে, জাদুঘরের ‘ভিতরের লোক’ই এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী নষ্ট হওয়া বা খোয়া যাওয়া নিয়ে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় জাদুঘর সংস্কারের কাজে একাধিক ‘অনিয়ম’ কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (সিএজি) গত বছরের রিপোর্টে প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে বলা হয়, সংস্কারের কাজ এমন ভাবে করা হয়েছে যাতে একাধিক দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী নষ্ট হয়েছে। গান্ধার স্তূপ ভেঙে পড়া, গ্যালারি সংস্কারের সময়ে সেখানকার সামগ্রী ও চিত্রের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া-সহ একাধিক বিষয়ে এনবিসিসি-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সিএজি রিপোর্ট। বলা হয়েছিল, তাদের অপটু হাতে ব্যবহারের জেরেই সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে তখনই বিতর্ক
দানা বেঁধেছিল।
যদিও এনবিসিসি-র তরফে জানানো হয়েছে, সংস্কার ও আধুনিকীকরণের কাজ ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত চলেছিল। তার আগে ২০১১ সালে তাদের সঙ্গে ভারতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের যে মউ সই হয়েছিল, সেখানে দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী সরানো বা হাত দেওয়ার কোনও এক্তিয়ার সংস্থার ছিল না। ওই বিষয়টি জাদুঘর কর্তৃপক্ষের লোকজনই দেখাশোনা করতেন। এনবিসিসি-র এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের নির্মাণ-বর্জ্য বহনকারী গাড়িতে একাধিক বার দুষ্পাপ্র্য সামগ্রী পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল। দেখতে পেয়ে আমরাই তা আটকে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। দুষ্পাপ্র্য সামগ্রী নষ্টের বিষয়টি রাজভবনেও জানিয়েছিলাম। তবে তা নিয়ে রাজভবনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছিল কি না, সেটা জানা নেই।’’
সূত্রের খবর, বছর সাতেক আগে জাদুঘর থেকে দুষ্পাপ্র্য সামগ্রী খোয়া যাওয়া-সহ একাধিক অনিয়মের বিষয়ে সরব হন জাদুঘরেরই এক সংরক্ষণবিদ। যিনি পরে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান। সংশ্লিষ্ট সংরক্ষণবিদের আকস্মিক নিখোঁজের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। ঘটনার তদন্তে নামে সিআইডি। তৎকালীন জাদুঘর অধিকর্তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। অভিযোগ, ওই বিতর্কের মধ্যেই তৎকালীন অধিকর্তা পদত্যাগ করেছিলেন।
যদিও জাদুঘরের বর্তমান অধিকর্তা অরিজিৎ দত্তচৌধুরী সামগ্রী পাচারের বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি জাদুঘরের দায়িত্বে এসেছি ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে। আমার কাছে এমন ঘটনা ঘটার কোনও খবর নেই।’’ দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী নষ্ট হওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দিয়েছেন অরিজিৎবাবু। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘আমি যত দূর জানি, দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী নষ্ট হওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। কারণ, সিংহভাগ সামগ্রীই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর যেগুলো সরানো যায় না, তা প্লাইউডের কেসিং করে পুরো বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।’’
কিন্তু তাতেও বিতর্ক মিটছে না। বরং তা আলাদা মাত্রা পেয়েছে গত বুধবার কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী প্রহ্লাদ সিংহ পটেলের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সৌজন্য সাক্ষাতের পরিপ্রেক্ষিতে। রাজ্যপাল টুইটারে জানিয়েছিলেন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভারতীয় জাদুঘর সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁদের কথা হয়েছে। রাজ্যপাল ওই দুই প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ়-এর চেয়ারম্যান। জাদুঘর সংস্কার ও আধুনিকীকরণের কাজ প্রাক্তন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সময়ে শুরু হলেও বর্তমান রাজনৈতিক আবহে এনবিসিসি-র দাবিকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সদস্য, সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলছেন, ‘‘দুষ্প্রাপ্য সামগ্রীর তালিকা প্রস্তুত করে দেখা উচিত, কতগুলি জিনিস নষ্ট হয়েছে বা বাইরে পাচার করে দেওয়া হয়েছে! জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ়-এর চেয়ারম্যান হিসেবে রাজ্যপালের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করা এবং দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা।’’