পুজোর নিরাপত্তায় কলকাতা পুলিশ। ছবি: কলকাতা পুলিশের সৌজন্যে
অষ্টমীর সন্ধ্যা। ভিড়ে ঠাসা মেট্রো। শোভাবাজার থেকে গিরিশ পার্ক পৌঁছতেই প্রায় চিলের মতো ভিড়ের মাঝ থেকে এক যুবককে ধরে বাইরে নিয়ে গেল কয়েক জন ব্যক্তি। পুজোর ভিড়ে যাতে পকেট কাটা না যায় বা মোবাইল চুরি না যায় চার জন্য এ ভাবেই বিভিন্ন জায়গায় সাদা পোশাকে কাজ করেছেন কলকাতা পুলিশের ওয়াচ বিভাগের গোয়েন্দারা। গ্রেফতার করা হয়েছে দুই মহিলা সহ ১৬ জন সন্দেহভাজনকে। উদ্ধার করা হয়েছে ১২ টি মোবাইল ফোন।
এদের সঙ্গে ছিলেন গুণ্ডা দমন শাখার গোয়েন্দারাও। পুজোর ক’দিল কলকাতা পুলিশের তারা সাদা পোশাকে মিশে ছিলেন ভিড়ের মধ্যে। তাদের তৎপরতাতেই ১৪৪ জনকে পাকড়াও করা হয়েছে অভব্যতার জন্য। একই ভাবে কলকাতা পুলিশের মহিলা সদস্যদের নিয়ে তৈরি মোটরবাইক বাহিনী উইনার্সও ছিল একই ভাবে সজাগ। রাস্তায় রাস্তায় তাঁরা নজরদারি করে গিয়েছেন মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য।
প্রতি বছর পুজোর সময় কলকাতা পুলিশের গোটা বাহিনীটাই রাস্তায় নামে যাতে উৎসবের তাল না কাটে। তবে এ বছর কলকাতা পুলিশের সামনে ট্রাফিক ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণে এখনও বন্ধ মাঝেরহাট ব্রিজ। অন্যদিকে ঠিক পুজোর আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে টালা সেতু। সব মিলিয়ে পুজোর ওই ক’দিন জেলা এবং শহরতলি থেকে আছড়ে পড়া জনস্রোতের মুখে শহরের রাস্তা কতটা সচল থাকবে তা নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত ছিলেন শীর্ষ পুলিশ কর্তারা।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে নজর রয়েছে, পাকিস্তানের পাশেই থাকবে বেজিং, চেনা অবস্থানে ফিরল চিন
দশমীর সন্ধ্যায় যদিও পুলিশ কমিশনার নিজে খুশি গোটা বাহিনীর কাজে। তিনি কলকাতা পুলিশের সদস্য এবং তাঁদের পরিবারকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে পুজোর ক’দিন গোটা বাহিনীর কাজের প্রশংসা করেছেন। তিনি বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে পাঠানো বার্তায় বলেছেন, ‘‘কলকাতায় পুজোর জন্য যে পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয় তা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এ বার প্রথম থেকে আমরা জোর দিয়েছিলাম ট্রাফিক বিভাগ এবং আইন শৃঙ্খলা বিভাগের সঠিক সমন্বয়ের উপর। সফল ভাবে সেই সমন্বয় করা সম্ভব হয়েছে। ঠিক একই ভাবে বেপরোয়া বাইক চালকদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।”
পুজোর দিনে রাস্তায় প্রতিমা দর্শনে যারা বেরিয়েছিলেন তাঁদের একজন টালিগঞ্জের সর্বাণী রায়। তিনি বলেন, ‘‘চেতলা বা নিউআলিপুর কিংবা রাসবিহারী মোড়ে জ্যাম হয়েছে। তবে তার মধ্যেও গাড়ির চাকা গড়িয়েছে। উত্তরে গাড়ি চলেছে মসৃণ ভাবে।” পুলিশের কর্তারাই মানছেন, তাঁরা নিজেরাও ভাবতে পারেননি এতটা মসৃণ হবে যান চলাচল। গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিকের দাবি, এ বারে পকেট মার হওয়া এবং মোবাইল চুরির অভিযোগও অনেক কম। ওয়াচ সেকশনের গোয়েন্দাদের নজরদারিতে গ্রেফতার হয়েছে অনেক পকেটমার।
অভব্যতার অভিযোগে কলকাতা পুলিশের মহিলা পুলিশের হাতে গ্রেফতার যুবক। ছবি: কলকাতা পুলিশের সৌজন্যে
আরও পডু়ন: দশমী কাটতেই ভারী বৃষ্টি, চলবে আরও ৪৮ ঘণ্টা, রবিবার থেকে আবার ফিরবে শরৎ
কলকাতা পুলিশের এই ‘পারফরম্যান্স’-এর প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেও। বুধবার তিনি পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রশংসা করেছেন গোটা বাহিনীর কাজে। তবে সব কিছুর মধ্যে নগরপাল বাহিনীর সদস্যদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, আরও তিনদিন অর্থাৎ বিসর্জন না মেটা পর্যন্ত একই ভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে গোটা বাহিনীকে।