প্রতীকী ছবি।
ভাঁড়ারে নতুন করে কোভিশিল্ড এলেও চাহিদা মিটল না তাতে। যার জেরে প্রতিষেধক পেতে এক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আর এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছোটাছুটি করতে হল অপেক্ষায় থাকা মানুষকে। কেউ পেলেন, কেউ আবার প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করেও হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। কলকাতা পুরসভার হাতে কোভিশিল্ডের জোগান পর্যাপ্ত না থাকায় সোমবার এ ভাবেই হয়রান হতে হল শহরবাসীকে। তবে এ দিন ফের কোভিশিল্ডের জোগান আসায় আজ, মঙ্গলবার তা দেওয়া হবে বলেই জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
জোগান পর্যাপ্ত না-থাকায় গত শুক্র ও শনিবার কোভিশিল্ড দেওয়া বন্ধ রেখেছিল পুরসভা। রবিবার এমনিতেই শহরে প্রতিষেধক কর্মসূচি বন্ধ থাকে। শনিবার রাতে কোভিশিল্ড পাওয়ার পরে সোমবার তা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি জানানো হয়েছিল, জোগান না থাকলে মঙ্গলবার ফের বন্ধ থাকতে পারে কোভিশিল্ড প্রদান। তাতেই সোমবার ভোর থেকে পুরসভার ১০২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৫০টি মেগা সেন্টারে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রথম ডোজ়ের অপেক্ষায় থাকা লোকজনের পাশাপাশি কোভিশিল্ডের প্রায় এক লক্ষ দ্বিতীয় ডোজ় বাকি রয়েছে। ফলে, চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু পুরসভার ভাঁড়ারে তত সংখ্যক প্রতিষেধক নেই। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘কোনও এক পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়তো ২৫০ ডোজ় প্রতিষেধক রয়েছে। কিন্তু সেখানে ভিড় করেছেন হাজারের বেশি মানুষ। তাই সকলকে প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’ ফলে হয়রান হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কেন্দ্রের তুঘলকি আচরণের জন্যই রাজ্যবাসীকে এমন ভুগতে হচ্ছে।’’
প্রতিষেধক নিতে এ দিন ভোর থেকেই লাইন পড়েছিল বাগবাজার পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। একই ভাবে ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে কালীঘাট দমকল কেন্দ্রের উল্টো দিকের পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও ভিড় করেছিলেন অসংখ্য মানুষ। সেখানে প্রায় আড়াইশো জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার পরে আচমকাই ঘোষণা করা হল, ‘আর প্রতিষেধক দেওয়া হবে না। এখান থেকে সোজা চলে যান। সামনেই দেখবেন, এ রকম লাইন রয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে পড়বেন।’
ঘোষণা শুনেই পড়িমরি করে ছুটে সকলে গিয়ে দাঁড়ালেন হরিশ মুখার্জি রোডের জয়হিন্দ মেগা সেন্টারে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এসেছিলেন কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা থেকে। দীর্ঘ দিন ধরেই পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে এসে বহু মানুষ পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিষেধক নিচ্ছেন। আর সেই কারণেই চাহিদা আরও বাড়ছে বলে মত পুর আধিকারিকদের একাংশের। তাঁদের কথায়, ‘‘পুর এলাকার বাইরের বাসিন্দা হলেও ওঁদের তো আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।’’
এ দিন পুরসভার প্রতিটি কেন্দ্রে কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ়ই দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মিলেছে কোভ্যাক্সিনও। তবে প্রতিটি পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই এ দিন নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘কেন্দ্রের তরফে পর্যাপ্ত জোগান না থাকার কারণেই সকলকে প্রতিষেধক দেওয়া যাচ্ছে না।’ পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘কোভিশিল্ডের তিন হাজার ডোজ় হাতে রেখে বাকিটা এ দিন দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত প্রতিষেধক না থাকায় এমন নোটিস দেওয়া হয়েছে।’’ এ দিন রাজ্যে কোভিশিল্ড আসার পরে তা থেকে ৩০ হাজার ডোজ় পেয়েছে কলকাতা পুরসভা।