থিকথিকে: সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যায় উপচে পড়া ভিড়ে উড়ে গেল কোভিড-বিধি। শনিবার, নিউ মার্কেট চত্বরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বিধিভঙ্গের হিড়িক থেকে বাদ গেল না সরস্বতী পুজোও। শনিবার সকালে স্কুলে আসা ভিড় দুপুরে উপচে পড়ল শহরের বিভিন্ন শপিং মল, ময়দান আর পার্কে। বিধি ভাঙার পুরনো রোগ দেখে চিকিৎসক মহলের আশঙ্কা, বর্ষবরণের মতোই খেসারত না দিতে হয়!
দিনকয়েক হল করোনা সংক্রমণের লেখচিত্র নিয়মিত নিম্নমুখী হচ্ছে। তবু সতর্কতা জরুরি, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। যার অন্যতম কারণ, পড়ুয়াদের সকলে এখনও প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ়ও পায়নি। এ দিন অবশ্য শহরে ঘুরে বেড়ানো কমবয়সিদের মধ্যে কোভিড নিয়ে কোনও সতর্কতাই চোখে পড়েনি। মাস্ক পরা বা দূরত্ব-বিধি মানার নির্দেশ কার্যত উবে গিয়েছে। লালবাজারের দাবি, পুলিশ দিনভর নজরদারি চালিয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত ৮টা থেকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত বিনা মাস্কে রাস্তায় বেরোনোর জন্য ৩৫৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ দিন সকাল থেকেই পুজো ঘিরে স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সকালে পার্ক, ময়দান, শপিং মলে ভিড় দেখা না গেলেও বেলা গড়াতেই বদলায় চিত্র। নন্দন চত্বর, ময়দান, প্রিন্সেপ ঘাট-সহ বিভিন্ন জায়গার দখল এ দিন চলে গিয়েছিল কমবয়সিদের হাতে। ভিড়ের নিরিখে টক্কর দিয়েছে শপিং মলগুলিও। দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলে ঢোকার লম্বা লাইন বাইরে বহু দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। খাবারের স্টলে ভিড়ের ঠেলাঠেলিতে দেখা গেল টেবিল দখলের হুড়োহুড়িও। ওই শপিং মলের জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘একে সপ্তাহের শেষ, তার উপরে সরস্বতী পুজো। ভিড়ের প্রত্যাশা ছিলই। কোডিভ-বিধি মেনে সকলকে ঢোকানো হয়েছে।’’
ভিড়ের একই ছবি দেখা যায় রাজডাঙা এবং পার্ক সার্কাসের শপিং মলে। ঢোকার সময়ে প্রত্যেকের মাস্ক এবং শরীরের তাপমাত্রা যাচাই করা হচ্ছিল। তবে ঢোকার পরে অনেককেই দেখা গেল মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে ঘুরে বেড়াতে আর দেদার নিজস্বী তুলতে। রাজডাঙার এক শপিং মলে দেখা গেল, মাস্ক হাতে ঘুরছেন ঈশিতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক তরুণী। কোভিড-বিধির কথা তুলতেই থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘আরে, এটা বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে! এ দিনও মাস্কে মুখ ঢাকলে তো সারা বছর আফশোস করতে হবে! আর করোনা হলে এখন জ্বর ছাড়া তেমন কিছু হচ্ছে বলে শুনছি না। শুধু শুধু দিনটা নষ্ট করে কী হবে!’’
দিনটা যে কেউই নষ্ট করতে রাজি নন, তা বোঝা গেল প্রিন্সেপ ঘাট, ময়দান, নন্দন চত্বরে গিয়ে। দুপুরের পর থেকেই প্রিন্সেপ ঘাটে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সেখানে গঙ্গার পাড় বরাবর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বেগ পেতে হয়েছে। বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে আসা সৈকত বিশ্বাস বললেন, ‘‘এ তো অষ্টমীর জনজোয়ার! শেষ দু’বছর ভয়ে ভয়ে কেটেছে, এ বার সবাই পুষিয়ে নিচ্ছে।’’ এ দিন ময়দান এলাকায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিনভর চলেছে আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া। বিধিভঙ্গের কথা শুনে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘সংক্রমণের বিধিনিষেধ এখনও মানা জরুরি। কিন্তু যে ভাবে ওমিক্রনকে হাল্কা করে নিচ্ছেন বেশির ভাগ মানুষ, সেটা না বর্ষবরণের পরবর্তী পরিস্থিতি ডেকে আনে।’’
এ দিন শুধু করোনা-বিধি ভাঙাই নয়, চলেছে পথের বিধি ভাঙাও। হেলমেট না পরে একটি বাইকে কোথাও দু’জন, কোথাও আবার তিন জন আরোহী উঠেছেন। সামনে দিয়ে গতির তুফান তুলে বেরিয়ে গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ ছিল দর্শক। যদিও লালবাজারের এক পুলিশকর্তার দাবি, ‘‘সর্বত্র নজরদারি ছিল। বিধি ভাঙলে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’’