ছবি পিটিআই
কারও করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, অথচ জ্বর কিছুতেই কমছে না। কারও রিপোর্ট নেগেটিভ আসার এক সপ্তাহ পরেও ফিরছে না স্বাদ-গন্ধ। কারও আবার রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও দেড় দিনের মধ্যেই প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই রোগীর মৃত্যুর পরে পরিবারের লোক জানতে পারছেন, রিপোর্টই নাকি ভুল ছিল! নতুন করে পরীক্ষা করিয়ে হাসপাতাল দেখেছে, রোগী পজ়িটিভ!
বাড়িতে বসে হাতে পাওয়া কোভিড রিপোর্ট নিয়ে এমনই নানা অভিযোগ সামনে আসছে। যার জেরে প্রশ্ন উঠছে এই ধরনের রিপোর্টের সত্যতা নিয়েই। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই রিপোর্ট নেগেটিভ দেখে আশ্বস্ত হয়ে রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না তাঁর পরিবার। যার ফল হচ্ছে মারাত্মক। আবার নিজেকে রোগমুক্ত ভেবে পজ়িটিভ রোগীর মেলামেশার ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে। এমন রিপোর্ট পেতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে দাবি অনেকের। এমনকি, প্রতারণা-চক্রের ফাঁদে খুইয়েছেন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাজার হাজার টাকা।
গত সোমবারই কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের তরফে তাদের হাসপাতালের নাম করে রোগীকে এমনই ভুয়ো কোভিড রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বৌবাজার থানায়। তাতে দাবি করা হয়েছে, চন্দননগরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন ব্যক্তি-পিছু ১৫০০ টাকার বিনিময়ে। কয়েক দিন পরে তিনি ট্রপিক্যালের নাম ছাপানো নেগেটিভ কোভিড রিপোর্ট দেন। এর পরেই এক জনের অবস্থার অবনতি হলে তিনি চিকিৎসকের কাছে যান। তখন সেই চিকিৎসক দাবি করেন, রিপোর্ট ভুল। এর পরে ট্রপিক্যালে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, ওই রিপোর্টটিই ভুয়ো! ট্রপিক্যালের সুপার রূপালি দে বলেন, “যে ফরম্যাটে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদের পুরনো ফরম্যাট। এখন সেটা ব্যবহারই হয় না। এমন তিনটি ঘটনা সামনে আসতেই থানায় অভিযোগ করেছি।”
ট্রপিক্যাল থেকে কোভিড পরীক্ষা করাতে চেয়ে প্রসেনজিতের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “একটু ভুল হওয়ায় ট্রপিক্যালের কাজ আপাতত করছি না। তবে ১৬০০ টাকায় অন্য আরও ভাল সংস্থা থেকে করিয়ে দেওয়া যাবে।” কী ভুল? প্রসেনজিতের উত্তর, “চন্দননগরের এক যুবক বলেছিলেন, নমুনা তুলে ওঁকে দিলে কলকাতার ট্রপিক্যাল থেকে রিপোর্ট করিয়ে আনবেন। বেলা ১০টার মধ্যে আমি ওঁকে নমুনা সংগ্রহ করে দিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন ওঁর ওই রিপোর্টে কিছু ভুল বেরিয়েছে। এর বেশি কিছু আপনাকে বলব না।” বৌবাজার থানা সূত্রের খবর, তদন্তে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের রিপোর্ট-কার্ডের ফরম্যাট কম্পিউটারে বানিয়ে তাতেই ইচ্ছেমতো রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।
লালবাজারের সাইবার শাখা সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে এমন ভুয়ো কোভিড রিপোর্টের প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছে। জানা গিয়েছে, শহর এবং শহরতলি জুড়ে বেশ কয়েকটি চক্র কাজ করছে। ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করছে তারা। এর পরে ফোটোশপে এডিট করে নামী সংস্থার কোভিড রিপোর্টের ফরম্যাটে মনের মতো তথ্য বসিয়ে তারা চালিয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে অনলাইন মাধ্যম জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রতারণা-চক্রের ফোন নম্বর। তাতে যোগাযোগ করে রিপোর্ট করাতে চাইলে টাকা পাঠানোর জন্য যে লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে, সেখানে ক্লিক করলেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা।
লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা ও সাইবার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বললেন, “দ্রুত এই চক্রের কয়েক জন গ্রেফতার হবে। যাঁরা পরীক্ষা করাতে চাইছেন, তাঁদেরও সতর্ক হতে হবে। অচেনা নম্বরে আর্থিক লেনদেন করা চলবে না। রিপোর্ট যা-ই আসুক, চিকিৎসকের মতামতকেই প্রাধান্য দিতে হবে।”