উৎপল ভাদুড়ি।
বৃদ্ধ বাবা করোনা আক্রান্ত। স্বাস্থ্য ভবনের উদ্যোগে ৯২ বছরের বাবাকে যাদবপুরের কেপিসি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা ভাদুড়ি। ৬ দিন পর মঙ্গলবার চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বন্ডে সই করে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে বাবাকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সেই সময় তুললেন আরও মারাত্মক অভিযোগ— তাঁর বাবার পাজামা জোর করে খুলিয়ে প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দিয়েছেন। নাকতলার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা নেটমাধ্যমেও এই অভিযোগ করেছেন। যদিও তাঁর তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কেপিসি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই।
প্রিয়াঙ্কার দাবি, তাঁর বাবা উৎপল ভাদুড়ি করোনা আক্রান্ত হন গত ৯ মে। কিন্তু ১২ মে থেকে তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। সেই সময় স্বাস্থ্য ভবন উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে ভর্তি করায় কেপিসি হাসপাতালে। সেখানে এম থ্রি ওয়ার্ডের ২০ নম্বর বেডে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছিল। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ, ওই হাসপাতালে তাঁর বাবার চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছিল না। তাই বন্ডে সই করিয়ে তিনি মঙ্গলবার উৎপলবাবুকে বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাতে রাজি হন। এর পরে বাড়ি ফেরানোর তোড়জোড় শুরু হয়। হাসপাতালের তরফে যে পোশাক দেওয়া হয়েছিল তাঁর বাবাকে, সেই সময় তা ফেরত চাওয়া হয় বলে জানান প্রিয়াঙ্কা। কিনে আনতে বলা হয় নতুন পাজামাও। কিন্তু লকডাউনে সব দোকান বন্ধ থাকায় নতুন পোশাক কেনা সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল কর্মীদের সে কথা জানানোর পরেই তাঁরা বাবার পাজামা খুলে নেন— এমন অভিযোগই করেছেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁর কথায়, ‘‘এর পর কোনও ক্রমে অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা একটা চাদরে বাবার আব্রু রক্ষা করে বাড়ি নিয়ে আসি। গেঞ্জি, ফতুয়া, লুঙ্গি পরিয়ে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওগুলো তো ওঁদের কাছেই ছিল। সেগুলো ফেরত দিলেও তো এত অসম্মানিত হতে হত না! আমার বাবার দুটো চোখই প্রায় নষ্ট। ৯৯ শতাংশই দেখতে পান না। তাঁর সঙ্গে এমন হওয়াটা মেনে নিতে পারছি না। ওঁরা পাজামাটাই খুলে নিল!’’
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, কোভিড হাসপাতালের ব্যবহৃত পোশাক বাড়ি নিয়ে যাবেন না বলেই রোগীর পরিবার অ্যাম্বুল্যান্স থেকে তা ফেলে দেন। কেপিসি হাসপাতালের সিইও জয়দীপ মিত্র বলেন, ‘‘এর আগে একাধিক রোগীকে হাসপাতালের পোশাকেই বাড়ি পাঠানো হয়েছে। ওই বৃদ্ধের পাজামা খুলে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’ তাঁর আরও দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। অভিযোগের কোনও সত্যতা মেলেনি।