COVID-19

covid 19: লাগোয়া জেলায় বাড়ছে কোভিড, চিন্তায় প্রশাসন

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেষ সাত দিনে একেবারে কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যার হার ক্রমশ বাড়ছে বলেই দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:১৩
Share:

সিঁদুরে মেঘ: করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যেই মাস্ক পরার প্রবণতা কমছে শহরবাসীদের মধ্যে। নিমতলার ভূতনাথ মন্দিরে। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনায় সংক্রমণের লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। রাজ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে আক্রান্তের তালিকাতেও প্রতিদিনই প্রথমে নাম থেকেছে শহর লাগোয়া এই জেলাটির। তাই সম্প্রতি ওই জেলার কয়েকটি পুর এলাকা নিয়ে ফের উদ্বেগে রয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেষ সাত দিনে একেবারে কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যার হার ক্রমশ বাড়ছে বলেই দেখা যাচ্ছে। বিগত ২৪ ঘণ্টার হিসেব অনুযায়ী, স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে গত ৩০ ও ৩১ অগস্ট যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭৯ এবং ৮৯ জন, সেখানে ১ সেপ্টেম্বর তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ১১৬ জনে। এর পরে ২ সেপ্টেম্বর আক্রান্তের সংখ্যা ১০২ জন, ৩ সেপ্টেম্বর ১০৯ জন, ৪ সেপ্টেম্বরে ১১৫ জন এবং ৫ সেপ্টেম্বরে ১১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘‘জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা যে বাড়ছে, তা ফের বোঝা যাচ্ছে। তাই কোভিড-বিধি মেনে সাবধানতা অবলম্বন করার পাশাপাশি প্রতিটি পুর এলাকায় প্রতিষেধক দেওয়াও বাড়াতে হবে।’’

সূত্রের খবর, উদ্বেগে থাকা পুরসভার তালিকায় প্রথমেই রয়েছে বিধাননগর। সেখানে বর্তমানে দিনে ১০-১২ জন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। এর পরেই রয়েছে উত্তর দমদম, বরাহনগর— সেখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৮-১০ জন। বরাহনগরে সম্প্রতি একই বাড়িতে এক সঙ্গে সাত জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। বরাহনগরের পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিকের কথায়, ‘‘একই বাড়িতে এক সঙ্গে অনেকে পজ়িটিভ হচ্ছেন। খবর পেতেই বাড়িটিকে মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন করে এলাকায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়েছে। সেই পরীক্ষায় যাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে, তাঁদের কারও প্রতিষেধক বাকি থাকলে তা দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’

Advertisement

একই রকম ভাবে যে বাড়িতে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই বাড়িটি চিহ্নিত করে ওই এলাকার প্রত্যেকে যাতে প্রতিষেধক পান, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান উত্তর দমদমের পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস।

ধর্মতলায় মাস্ক পরার প্রবণতা কমছে শহরবাসীদের মধ্যে। সুমন বল্লভ

অন্য দিকে, দুশ্চিন্তার তালিকায় ওই তিন পুরসভার পরেই নাম রয়েছে মধ্যমগ্রাম, কামারহাটি ও নিউ টাউন-কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এলাকার। সেখানে দিনে কমবেশি পাঁচ জন সংক্রমিত হচ্ছেন। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘যেখানে যেমন আক্রান্ত মিলছে, তেমন ভাবেই কন্টেনমেন্ট, মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হচ্ছে। সব পুর এলাকাতেই পরীক্ষা ও প্রতিষেধক প্রাপকের সংখ্যায় যাতে ঘাটতি না থাকে, তাতে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

বর্তমানে দৈনিক সংক্রমণ হাজারের নীচে নামলেও করোনা কোথাও ঘাপটি মেরে রয়েছে কি না, তা জানতে ‘সেন্টিনেল সার্ভেল্যান্স’ শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর। অগস্টের মাঝামাঝি রিপোর্টে উত্তর ২৪ পরগনার পজ়িটিভিটি রেট ২-৩ শতাংশের মধ্যে ছিল। সেই সময়ে সেখানে দৈনিক আক্রান্ত ছিল ৮০ থেকে ৯০-এর মধ্যে। কিন্তু চলতি মাসে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন পজ়িটিভিটি রেট ৩-৩.৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। প্রশাসনের অন্দরের পর্যবেক্ষণ, ডেঙ্গি বা ডায়েরিয়া— যে কোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রেই এই জেলা থাকে শীর্ষ স্থানে।

স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের মতে, এই জেলায় ২২টি পুরসভা ও অনেকগুলি পঞ্চায়েত এলাকা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি পুর এলাকা কলকাতা লাগোয়া। এ ছাড়া পুর এলাকাগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকে স্থানীয় পুরসভার হাতে। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়ে স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে পুরসভাগুলির সমন্বয়ে অভাব দেখা যায়। সে জায়গায় ব্লকের ক্ষেত্রে সরাসরি স্বাস্থ্য প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সুবিধা হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একেবারে কলকাতা ঘেঁষা এই জেলা অত্যন্ত ঘিঞ্জি জনবসতিপূর্ণ। তাই সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। তবে সব দিকে নজরদারি চালিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement