প্রতীকী ছবি।
পড়শি দুই যুবকের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচলেন একই বাড়ির তিন বাসিন্দা। যদিও গৃহকর্ত্রী, বছর পঁয়ত্রিশের তরুণী ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁর স্বামী ও মেয়েও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি। তরুণীর স্বামীর দেহের ২০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। ওই দম্পতির ১৩ বছরের মেয়ের শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে বড়তলা থানা এলাকার গোয়াবাগান লেনের বস্তিতে। পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির জেরে মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন ওই দম্পতি। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই দম্পতির দুই ছেলেও রয়েছে। তবে তারা ঘটনার সময়ে বাড়িতে ছিল না।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বড়তলা থানায় খবর আসে, ১৯ডি গোয়াবাগান লেনে একটি বাড়িতে তিন জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। পুলিশ পৌঁছে দেখে, তিন জনকেই উদ্ধার করেছেন স্থানীয় লোকজন। বাবা এবং মেয়ের শরীরের পিছন দিক পুড়ে গিয়েছে। তরুণী তখনও উঠোনে পড়ে আছেন।
দুপুরে গোয়াবাগানে গিয়ে দেখা গেল, এক প্রতিবেশী সোনু খারোয়ার তখনও ঘটনার আকস্মিকতা থেকে বেরোতে পারেননি। জানালেন, এ দিন তিনি কাজে বেরোনোর আগে হাত ধুতে বাইরে বেরিয়েছিলেন। হঠাৎ সামনের ঘরের জানলায় ধোঁয়া দেখে উঁকি মেরে দেখতে যান। তখনই ঘরের দরজা খুলে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’, চিৎকার করতে করতে জ্বলন্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন তরুণীর স্বামী। পিছনে তাঁর মেয়ে। দু’জনকে ওই অবস্থায় দেখে হাতের কাছে গামলা থেকে জল ছুড়তে থাকেন সোনু।
তখনই কাজে যাওয়ার জন্য বেরোচ্ছিলেন আর এক পড়শি অমিত সিংহ। তিনিও ওই দৃশ্য দেখে বাবা-মেয়ের গায়ে জল ঢালতে শুরু করেন। এ দিকে, তখন ঘরের ভিতরে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় কাতরাচ্ছেন তরুণী। অমিত এবং সোনু তাঁকে উদ্ধার করার ফাঁকেই ফোন করেন স্থানীয় কাউন্সিলরকে। তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকতে বলার পাশাপাশি দু’জন ব্যস্ত হয়ে পড়েন তরুণীকে বাঁচাতে ও ঘরের আগুন নেভাতে।
এরই মধ্যে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে পৌঁছে যান কাউন্সিলর। দ্রুত তিন জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পুলিশ জানায়, তরুণীর স্বামী ফুচকা বিক্রি করেন। তিনি থাকতেন চালতাবাগানে। বছর দেড়েক আগে স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে গোয়াবাগানে উঠে আসেন। পড়শিরা জানিয়েছেন, টাকা-পয়সা, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে দম্পতির মধ্যে প্রায়ই অশান্তি হত। এ দিনও সকালে দু’জনে বাইরে থেকে ঝগড়া করতে করতে এসে দরজা বন্ধ করে দেন। তার পরেই ওই ঘটনা।