মেয়ে-জামাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছেন সম্পূর্ণার বাবা কৃষ্ণ সরকার। — নিজস্ব চিত্র
বৃহস্পতিবার এক দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার চারু মার্কেট থানা এলাকায়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলের পাশে কেএমডিএ আবাসনের পাশেই ভাড়া থাকতেন এই দম্পতি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দম্পতির নাম অরিজিৎ দত্ত (৩৪) এবং সুপর্ণা দত্ত (৩২)। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে চারু মার্কেট থানার পুলিশ। পৌঁছেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাবিভাগের আধিকারিকরা। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, আত্মহত্যা করেছেন ওই দম্পতি। তবে আত্মহত্যার কারণ নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে খবর, এ দিন অনেক বেলা পর্যন্ত ওই দম্পতি ঘরের দরজা না খোলায় কয়েকজন প্রতিবেশী এবং বাড়ির মালিক দরজায় ধাক্কা দেন। আবাসনের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন ওই দম্পতি। কিন্তু বেশ কয়েকবার ডাকাডাকির পরও সাড়া না পাওয়ায় তাঁরা সন্দিহান হন। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে অরিজিতের দেহ। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। অরিজিৎ এবং সুপর্ম্পূনা দু’জনকেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: চিনা নজরদারির তদন্ত-রিপোর্ট ৩০ দিনেই, জানালেন বিদেশমন্ত্রী
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনের দেহই গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন সুপর্ণার বাবা কৃষ্ণ সরকার। চেতলা রোডে তাঁর বাড়ি।তিনি বলেন, তিন বছর আগে অরিজিতের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়। জামাই অ্যাপ ক্যাব চালাতেন। দম্পতির একটি সন্তান হয়েছিল। কয়েক মাস আগেই চার মাস বয়সে সেই সন্তানের মৃত্যু হয়। কৃষ্ণের দাবি, মেয়ে-জামাইয়ের সম্পর্ক খুবই ভাল ছিল। আত্মহত্যার কোনও কারণ নেই। তবে গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দম্পতির মৃত্যু আপাত ভাবে আত্মহত্যার কারণে বলেই মনে করা হচ্ছে। একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গিয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার আগে চূড়ান্ত ভাবে কিছু বলা যাবে না।
তবে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন লকডাউনের ফলে অনটনের মধ্যে দিয়ে চলছিলেন ওই দম্পতি। বেশ কয়েক মাস ফ্ল্যাটের ভাড়াও দিতে পারেননি। সুইসাইড নোটে এমন কিছু উল্লেখ নেই যা থেকে আত্মহত্যার কারণ স্পষ্ট হয়। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘অরিজিৎ একটা গাড়িও কিনেছিলেন অ্যাপ ক্যাব হিসাবে ভাড়ায় চালানোর জন্য। সেই গাড়ির ঋণের মাসিক কিস্তিও শোধ করতে পারছিলেন না তিনি।” সন্তানের মৃত্যু এবং তীব্র অনটন, এই দুইয়ের জেরে অবসাদে ভুগছিলেন দম্পতি এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তার জেরেই আত্মহত্যা করেছেন ওই দম্পতি, এমনটাই অনুমান পুলিশের।