মাঝগঙ্গায় লঞ্চ থেকে ঝাঁপ যুগলের

তখন বিকেল পাঁচটা। হাওড়াগামী লঞ্চে অফিস ফেরত যাত্রীদের ভিড়। স্ট্র্যান্ড রো়ডের শিপিং জেটি থেকে লঞ্চে উঠেছিলেন বছর সাতাশের তরুণ-তরুণীও। আর পাঁচ জনের মতো পাশাপাশি বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:১৭
Share:

তল্লাশি: লঞ্চে করে চলছে যুগলের খোঁজ। মঙ্গলবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

তখন বিকেল পাঁচটা। হাওড়াগামী লঞ্চে অফিস ফেরত যাত্রীদের ভিড়। স্ট্র্যান্ড রো়ডের শিপিং জেটি থেকে লঞ্চে উঠেছিলেন বছর সাতাশের তরুণ-তরুণীও। আর পাঁচ জনের মতো পাশাপাশি বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। হঠাৎই ছন্দপতন! কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক জন যাত্রী দেখলেন, লঞ্চ থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ মারলেন ওই যুগল। অনেকেই এই দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে যান। মিনিট কয়েক পরে ঘোর কাটতেই তাঁরা লঞ্চ থেকে ঝুঁকে গঙ্গায় দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে সময়ে জোয়ার চলায় জল ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়নি।

Advertisement

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকেলে। কিছু ক্ষণ পরে সম্বিৎ ফিরতে কয়েক জন যাত্রী দেখেন, সিটে পড়ে রয়েছে একটি ব্যাগ। সেটি ছিল তরুণীর হাতে। ব্যাগ খুলে যাত্রীরা দেখেন, তাতে রয়েছে একটি মোবাইল, কিছু কাগজপত্র ও একটি প্রেসক্রিপশন। পুলিশ জানিয়েছে, প্রেসক্রিপশনে নাম লেখা রয়েছে সুজাতা ভারতী। তিনি ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত এবং তাঁর কেমোথেরাপি চলছে বলেও উল্লেখ রয়েছে সেখানে। মঙ্গলবারের এই ঘটনায় ডুবুরি নামিয়ে দুই তরুণ-তরুণীর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। যদিও রাত পর্যন্ত কারও সন্ধান মেলেনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, যাত্রীদের কয়েক জন ব্যাগে থাকা মোবাইলটি ঘেঁটে ‘পাপা’ লেখা একটি নম্বরে ফোন করেন। ফোনটি যায় মল্লিকবাজারের বাসিন্দা এক তরুণের বাবার কাছে। তাঁকে পুরো বিষয়টি জানানো হলে তিনি ছুটে আসেন উত্তর বন্দর থানায়। খবর পেয়ে ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে উত্তর বন্দর থানা ও রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ। হাজির হয়েছে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে পুলিশ জানতে পারে, তাঁদের কাচের ব্যবসা রয়েছে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে ছেলে তাঁর সঙ্গেই ব্যবসার কাজকর্ম দেখে। যদিও তিনি সুজাতা নামে ছেলের কোনও বান্ধবীকে চেনেন না বলেই দাবি করেছেন।

Advertisement

ব্যাগে যে প্রেসক্রিপশনটি মিলেছে, সেটি ঘেঁটে কিছু ফোন নম্বর পায় পুলিশ। তার সূত্র ধরে খবর পাঠানো হয় সুজাতা ভারতীর বাড়িতে। রাতেই থানায় আসেন ওই তরুণীর পরিবারের লোকজন ও বন্ধুরা। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী বিবাহিতা। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। এক সময়ে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরে কেমোথেরাপি চলায় আর সে ভাবে থিয়েটারও করতে পারেন না। পুলিশের অনুমান, এর পরেই মল্লিকবাজারের ওই তরুণের সঙ্গে সুজাতার পরিচয় হয়। কিন্তু ঝাঁপ দেওয়া তরুণীই সুজাতা কি না, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নয় তারা।

ঘটনায় আরও অনেক প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। প্রথমত, ওই তরুণী কেন আচমকা গঙ্গায় ঝাঁপ দিলেন? তিনি কি ক্যানসারের চিকিৎসা করতে করতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে এমন করেছেন? একই কাজ ওই তরুণই বা করলেন কেন? তা হলে কি তাঁদের মধ্যে কোনও বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল? দুই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সব দিকই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement