— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কখনও শিশু চুরি, কখনও বা মোবাইল চুরির অভিযোগে গণপিটুনি। সম্প্রতি গণপিটুনির এমন একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, মানুষের সহিষ্ণুতা কেন এত কমে যাচ্ছে? নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার এই প্রবণতা কেন দিন দিন বাড়ছে? স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা মনে করছেন, সহিষ্ণুতার পাঠ অথবা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকার পাঠ দেওয়া উচিত স্কুলজীবন থেকেই। সেই পাঠ শুধু পড়ুয়াদের দিলেই হবে না, দিতে হবে অভিভাবকদেরও। এই ভাবনা থেকেই শহরের কিছু স্কুল অভিভাবকদেরও কাউন্সেলিং শুরু করেছে।
যেমন, যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বললেন, ‘‘প্রতিটি শ্রেণির অভিভাবকদের ডেকে আমরা নির্দিষ্ট দিনে কাউন্সেলিং করাচ্ছি। সম্প্রতি হয়ে গেল অষ্টম শ্রেণির অভিভাবকদের কাউন্সেলিং। সেখানে কাউন্সেলরেরা বলেছেন, পড়ুয়াদের সহিষ্ণুতার পাঠ শিক্ষকদের পাশাপাশি দিতে হবে অভিভাবকদেরও। অনেক সময়ে বাড়িতেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা কাম্য নয়। অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’’
সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা সর্বাণী সেন বললেন, ‘‘স্কুলে মাঝেমধ্যেই পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও কাউন্সেলিং হয়। তবে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে ওই কাউন্সেলিং আবার শুরু করছি। আমরা অনেক সময়ে খেয়াল করেছি যে, স্কুলে পড়ুয়াদের মধ্যে ঝগড়া চলাকালীন কেউ হয়তো কোনও কুশব্দ ব্যবহার করল বা অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে দেখাল। জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক সময়েই জানতে পেরেছি যে, ওই শব্দ বা অঙ্গভঙ্গি ওরা বাড়িরই কারও কাছ থেকে শিখেছে। আমরা তখন ওদের বোঝাই যে, সহপাঠীর সঙ্গে ওই আচরণ মোটেও কাম্য নয়। এ কথা একই ভাবে অভিভাবকদেরও বোঝানো হয়, যাতে তাঁরা সন্তানদের সেই সুশিক্ষা দেন ও সহবত শেখান। এর ফলে পড়ুয়াদের আচরণে অনেকটাই শৃঙ্খলা এসেছে।’’
যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, ‘‘গণপিটুনির সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি আমাদের ভীষণ ভাবে ভাবিয়েছে। কিছু দিন আগে যাদবপুরে র্যাগিং-এর জেরে এক ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। যারা র্যাগিং করে অথবা গণপিটুনিতে অংশ নেয়, তাদের সেই হিংস্র আচরণের সংশোধন হতে পারে স্কুলজীবনেই। আমরা লক্ষ রাখি, কোনও ছাত্রের আচরণগত পরিবর্তন আশপাশের পড়ুয়াদের থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে কি না। তেমন হলে আলাদা করে সেই ছাত্রের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলি, যদিও সেটা ওই ছাত্রকে বুঝতে দিই না।’’
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের মতে, ‘‘অনেকে হয়তো জানেনই না যে, আইন নিজের হাতে তোলা যায় না, অথবা সহিষ্ণুতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রত্যেক পড়ুয়ার ক্ষেত্রেই জীবনের এই সব গুরুত্বপূর্ণ পাঠ বাড়ি থেকে শুরু হয়। তাই তাদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও কাউন্সেলিং খুব দরকার।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘গণমাধ্যম, বিশেষ করে সিনেমা নির্মাতাদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। কোনও সিনেমায় হয়তো দেখানো হচ্ছে, সামান্য অপরাধে নায়ক অপরাধীকে বেধড়ক মারছে। সেটা যে করা যায় না, নিজের হাতে যে আইন তুলে নেওয়া যায় না, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। বিশেষ করে, স্কুলপড়ুয়ারা বুঝতে পারে না। তারা দেখে ভাবে, এটাই স্বাভাবিক। অপরাধ করলে পুলিশ না ডেকে অভিযুক্তকে রাস্তাতেই বেধড়ক প্রহার করা যায়। তাদের বোঝাতে হবে যে, সিনেমা আর বাস্তব এক নয়। আইন কোনও ভাবেই নিজের হাতে নেওয়া যায় না।’’