সুশান্ত ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
পুরপ্রতিনিধিকে খুনের চেষ্টার নেপথ্যে কি তবে জমি-বাড়ি সংক্রান্ত সিন্ডিকেট-রাজদায়ী? গত শুক্রবার রাতে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধিকে গুলি করে খুনের চেষ্টার ঘটনার পরে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে শহরবাসীর মনে। যদিও ‘আক্রান্ত’ পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষের দাবি, ‘‘শুধু ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডেই নয়, সারা কলকাতা জুড়েই বেআইনি নির্মাণ চলছে।’’ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম রয়েছেন পুর বিল্ডিংদফতরের দায়িত্বে। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এটা কি খোদ মেয়রের ব্যর্থতা নয়? এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘‘বাম আমলে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। গার্ডেনরিচে বেআইনিবাড়ি ভাঙার পরে পুরসভা কঠোর নিয়মকানুন করেছে। আগের তুলনায় বেআইনি নির্মাণ অনেক কমেছে। এখন কোথায় হচ্ছে, তার নির্দিষ্ট ঠিকানা দিলে চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, কঠোর ব্যবস্থা নেব।’’
গত সপ্তাহে সুশান্তের উপরে হামলার পরে এলাকায় বেআইনি নির্মাণের রমরমা নিয়ে সরবহয়েছেন স্থানীয়েরা। অভিযোগ, সুশান্ত যে এলাকার পুরপ্রতিনিধি, সেই ওয়ার্ড এলাকা ছেয়েছে একের পর এক বেআইনি নির্মাণে।পরিস্থিতি এমনই যে, পাশাপাশি দু’টি বাড়ির মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব রাখার নিয়মটুকুও সেখানে মানা হয় না। পরের পর বহুতল গজিয়ে গিয়েছে, অথচ পাশের রাস্তায় দমকলের ঢোকার রাস্তাটুকু নেই! ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের মার্টিনপাড়া,গুলশন কলোনি— সর্বত্রই এক পরিস্থিতি।
গত বছরের অগস্টেমার্টিনপাড়ায় বাড়ির ছাদে জলের পাইপ বসানোর কাজ করতে গিয়ে পাশে থাকা হাইটেনশন তার স্পর্শ করে মৃত্যু হয়েছিল একযুবকের। জানা গিয়েছিল, অবৈধ ভাবে বহুতল তৈরি হওয়ার কারণেই হাইটেনশন তার এমন বিপজ্জনক ভাবে বহুতলের পাশ দিয়ে গিয়েছে। পুরসভার বিল্ডিং দফতর সূত্রেও জানা যাচ্ছে, ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ নির্মাণকাজই বেআইনি। যদিও পুরপ্রতিনিধির দাবি, ‘‘আমি দু’বছর হল এসেছি। আমি আসার পরে কোনও বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে না। যা হয়েছে, তা আমি আসার আগে।’’
তবে নিজের ওয়ার্ডের বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত খবর পুর কর্তৃপক্ষের কানে সুশান্ত কখনওতুলেছিলেন কিনা, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তথা ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সুশান্তের উত্তর, ‘‘২০২১সালের আগে যে নির্মাণগুলি হয়েছে, তা নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়নি। ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে আমি জিতে আসার পরে বেআইনি নির্মাণ নিয়েঅভিযোগ পেলে পুরসভায় জানিয়েছি। সেগুলির অনেকাংশ ভাঙাও হয়েছে। গত শুক্রবারও একটা বেআইনি বাড়ি ভাঙা হয়েছে।’’
ফিরহাদের অবশ্য দাবি, গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে পড়ার পরে এ নিয়েনিয়মকানুন আরও কঠোর করেছে পুরসভা। তিনি বলছেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করার ক্ষমতা পুরপ্রতিনিধির নেই। এ সব বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা দেখেন। পুরসভা এখন বেআইনি নির্মাণে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি,বেআইনি নির্মাণের নির্দিষ্ট ঠিকানা জানালে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের চাকরি যাবে।’’