বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুর করে চলল তাণ্ডব, অভিযুক্ত কাউন্সিলরই

বুধবার সকালে বেলেঘাটার রাধামাধব দত্ত গার্ডেন লেনের এই ঘটনায় যাঁদের বাড়ি এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তাঁদেরই গ্রেফতার করেছে বেলেঘাটা থানার পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

ভাঙচুরের পরে সেই গাড়ি। বুধবার, বেলেঘাটায়। নিজস্ব চিত্র

ইট, লাঠি দিয়ে প্রথমে রাস্তায় দাঁড় করানো গাড়ি ভাঙচুর করল জনা চল্লিশের ভিড়। এর পরে সেই ইট ছোড়া শুরু হল গাড়ির মালিকের বাড়ি লক্ষ্য করে। ইট দিয়েই ভাঙা হল বাড়ির গায়ে লাগানো একের পর এক সিসি‌ ক্যামেরা!

Advertisement

বুধবার সকালে বেলেঘাটার রাধামাধব দত্ত গার্ডেন লেনের এই ঘটনায় যাঁদের বাড়ি এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তাঁদেরই গ্রেফতার করেছে বেলেঘাটা থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম জয়ব্রত দে এবং সুব্রত দে। সুব্রত সম্পর্কে জয়ব্রতের দাদা। তাঁদের বিরুদ্ধে এক তরুণী যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ দিন ধৃতদের শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও জয়ব্রতের আত্মীয় সোমা পোদ্দারের দাবি, ‘‘সামান্য গাড়ি রাখা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। বেলেঘাটার কাউন্সিলর পবিত্র বিশ্বাস দলবল নিয়ে এসে আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছেন। ক্লাব নিয়ে একটি পুরনো বিবাদ ছিল পবিত্রের সঙ্গে। সে কারণেই এ ভাবে জয়ব্রতদের ফাঁসানো হয়েছে।’’ পবিত্রবাবু অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, জয়ব্রতদের বিরুদ্ধে এলাকায় একাধিক অভিযোগ ছিল। এ দিন ওঁরা এক তরুণীকে হেনস্থা করেছেন। সেই রাগেই এলাকাবাসী গিয়ে জয়ব্রতদের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছেন। হেনস্থার শিকার হওয়া তরুণী এবং এলাকার লোকই থানায় অভিযোগ করেছেন। পবিত্রবাবুর কথায়, ‘‘এর সঙ্গে আমার যোগ নেই।’’ বেলেঘাটা থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে।’’ ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় আগে থাকতেন জয়ব্রতেরা। সম্প্রতি রাধামাধব দত্ত গার্ডেন লেনের ওই বাড়িতে আত্মীয়ের সঙ্গে ভাড়া থাকতে শুরু করেন জয়ব্রত। সেখানেই মাঝেমধ্যে আসেন জয়ব্রতের দাদা সুব্রত। মঙ্গলবার রাতে এই বাড়ির সামনেই গাড়ি রাখেন জয়ব্রতের পুত্র। এ দিন সকালে তিনি দেখেন সেই গাড়ির কাচ ভাঙা। এর পরে এলাকায় জয়ব্রত চিৎকার-চেঁচামেচি করেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। সেই সময়েই চল্লিশ জন মতো জড়ো হয়ে জয়ব্রতের গাড়ি নতুন করে ভাঙচুর শুরু করেন। এর পরে জয়ব্রতদের বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে এর পরে জয়ব্রতদের থানায় নিয়ে যায় বেলেঘাটা থানার পুলিশ। জয়ব্রতের আত্মীয় সোমা বলেন, ‘‘আমরা চার জন আর পবিত্রের সঙ্গে এত জন লোক, পারা যাচ্ছিল না। পবিত্রও আমাদের বাড়িতে ঢুকে জয়ব্রতকে মেরেছেন। এখন থানায় গ্রেফতার করিয়ে আমাদের বাড়িওয়ালাকে চাপ দিচ্ছেন। ওঁর দাবি, রাতের মধ্যেই আমাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে!’’ তরুণীর দাবি, ‘‘জয়ব্রতেরা আমাকে হেনস্থা করেছেন। গালিগালাজ করেছেন। সেটাই থানায় জানিয়েছি।’’

Advertisement

বেলেঘাটার রাজনীতির সঙ্গে যুক্তেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, এলাকায় তৃণমূলকর্মী হিসেবে পরিচিত জয়ব্রত। পুরনো তৃণমূলনেতা হিসেবে তাঁর শ্বশুরেরও প্রভাব রয়েছে এলাকায়। গা়ড়ি সারাইয়ের পাশাপাশি নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গেও ইদানীং যুক্ত হয়েছেন জয়ব্রত। সম্প্রতি, একটি ক্লাবের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে জয়ব্রতের সঙ্গে পবিত্রের বিবাদ শুরু হয়। একে অপরের বিরুদ্ধে থানাতেও অভিযোগ করেন। বিবাদের জেরেই কিছু দিন বাড়িছাড়া ছিলেন জয়ব্রত। তার পরে পুরনো পাড়া ছেড়ে সম্প্রতি রাধামাধব দত্ত গার্ডেন লেনে থাকতে হচ্ছিল জয়ব্রতকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement