Corruption

Corruption: দশম না পেরিয়েও মাথা পরিচালন সমিতির, দুর্নীতি কি সেই পথেও

২০১১ সালে রাজ্যে পট পরিবর্তনের পরে শিক্ষাঙ্গনে এই ‘অনিলায়ন’ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২২ ০৭:৫২
Share:

ফাইল চিত্র।

কেউ একসঙ্গে ১৩টি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে থেকেছেন। কেউ অষ্টম শ্রেণির চৌকাঠ না পেরিয়েও হয়ে উঠেছেন ‘শিক্ষানুরাগী’ এবং সেই সূত্রেই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি। কেউ আবার দশম শ্রেণিতেই পড়া ছাড়লেও স্রেফ শাসক দলের লোক হিসাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচলন সমিতির মাথায় বসেছেন এবং শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন!

Advertisement

এই সব ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছে, বিক্ষোভ হয়েছে, কিন্তু প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য এই সব ব্যক্তিদের প্রভাব কলেজগুলিতে কিছুমাত্র কম হয়নি বলে অভিযোগ। এখন কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় নাম জড়িয়ে পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর প্রভাবের এই দিকটি নিয়েও সমান ভাবে আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষামহলের একাংশের অভিযোগ, পরিচালন সমিতিকে ব্যবহার করেই পার্থর মূল দুর্নীতির শুরু। পরবর্তী কালে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জমি-বাড়ির লেনদেন বা প্রোমোটারির মতো নানা দিক। অভিযোগ, কলেজে ছাত্র ভর্তি করানো থেকে টাকার বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ বা সময়ে সময়ে কলেজের নামে আসা টাকার তহবিল নয়ছয়ও হয়েছে পার্থর এই স্নেহধন্যদের মাধ্যমে। ফলে এই দিকটি নিয়েও আলাদা করে তদন্ত হওয়া দরকার বলে দাবি অনেকের। ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ যেমন বললেন, ‘‘মন্ত্রী হয়েই পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার পথে হেঁটেছিলেন। মূলত পরিচালন সমিতির মাথায় সরকারের লোক বসিয়ে সাপ্লাই লাইন তৈরি করা হয়েছিল। কী ভাবে, কোন স্তর পর্যন্ত সেই লাইনে কী কী গিয়েছে, তার তদন্ত দরকার।’’

শিক্ষাক্ষেত্রে দলতন্ত্রের রমরমা অবশ্য বামফ্রন্টের আমলেই শুরু হয়েছিল বলে অভিযোগ। সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের আমলে শিক্ষার সব ক্ষেত্রে দলের লোক বসানোর রেওয়াজটি পূর্ণতা পায়। ২০১১ সালে রাজ্যে পট পরিবর্তনের পরে শিক্ষাঙ্গনে এই ‘অনিলায়ন’ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দেখা যায়, রাজ্যের অধিকাংশ কলেজের মাথায় জাঁকিয়ে বসেছেন শাসক দলের লোক। অনেকের দাবি, আগে কলেজের পরিচালন সমিতিতে সরকারের মনোনীত দু’জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত দু’জন, চার জন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং শিক্ষাকর্মীদের দু’জন প্রতিনিধির পাশপাশি এক জন ছাত্র প্রতিনিধি থাকতেন। কিন্তু এখন কলেজের পরিচালন সমিতিতে সরকার মনোনীত দুই থেকে তিন জন সদস্য, উচ্চশিক্ষা দফতর মনোনীত এক জন সদস্যের পাশাপাশি থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত দু’জন। এ ছাড়াও, দু’জন শিক্ষক প্রতিনিধির সঙ্গেই রাখা হয় এক জন করে শিক্ষাকর্মী ও ছাত্র প্রতিনিধিকে। অর্থাৎ, কলেজের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে পরিচালন সমিতিতে বাড়ানো হয়েছে সরকারের মনোনীত লোক। আগে যেখানে পরিচালন সমিতির সভাপতি কে হবেন, সেটা সমিতির সদস্যদের সর্বসম্মতিতে ঠিক করতে হত, পার্থর সময় থেকেই সেটা ঠিক করে পাঠায় শিক্ষা দফতর।

Advertisement

‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) বিল, ২০১৭’ পাশ হওয়ার পর থেকে ‘শিক্ষানুরাগী’ হলেই স্থানীয় বিধায়ক থেকে দলের নেতা বা পার্থর মতো বড় নেতার আশীর্বাদধন্য পাড়ার দাদাদের কারও আর কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় বসতে কোনও বাধা থাকে না বলে অভিযোগ। তাঁদের অনেকেরই স্কুল পাশের যোগ্যতা না থাকলেও সমস্যা হয় না বলে অভিযোগ। পার্থ অবশ্য এক বার জানিয়েছিলেন, কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে কিছুই বদলায়নি। কারণ, নতুন আইন অনুযায়ী কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে যিনি বসেন, তাঁকে আসতে হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। আর নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর ন্যূনতম কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার কথা আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া নেই।

এই সুযোগেই ছাত্র ভোট না হওয়া সত্ত্বেও ছাত্র সংসদের প্রতিনিধির দেখা মেলে পরিচালন সমিতির বৈঠকে। কোন ক্ষমতাবলে কোন ছাত্র সেই বৈঠকে থাকতে পারবেন, তা ঠিক করে দেন পরিচালন সমিতির সভাপতিই। ভর্তি প্রক্রিয়ার সময়ে ছাত্র সংসদের নামে তহবিলও জমা পড়ে কলেজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। বহু ক্ষেত্রেই সেই টাকা কোন খাতে, কী ভাবে ব্যবহার হচ্ছে, তার হিসাব মেলে না বলে অভিযোগ। শুধুমাত্র গায়ক কে কে-র মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটলে ছাত্র না হয়েও ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে পরিচালন সমিতির বৈঠকে কলেজের শিক্ষাকর্মীর উপস্থিতির কথা সামনে আসে! এ-ও জানা যায়, কলেজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা উঠে যায় সেই শিক্ষাকর্মীর সইয়ের জোরে। শুধুমাত্র দর্শকের ভূমিকায় থাকেন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং অধ্যক্ষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement