পাকড়াও: মাস্ক না-পরে বেরোনোয় গ্রেফতার করা হয়েছে এই ব্যক্তি-সহ সাত জনকে। শুক্রবার, নাগেরবাজার মোড়ে। নিজস্ব চিত্র
পুলিশ হাত দেখাতে আচমকা ব্রেক কষলেন তরুণ। মোটরবাইক রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে হাজির হলেন দমদম থানার আইসি সুবীর রায়ের সামনে। বাইকের নথি আর লাইসেন্স এগিয়ে দিলেন। সুবীরবাবু তা হাতেই নিলেন না। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মাস্ক কোথায়?’’ উত্তর এল, এই তো আছে পকেটে।
—পরেননি কেন?
—সামান্য রাস্তা যাব স্যর। তাই আর পরিনি।
—ঠিক আছে। আগে মাস্ক পরুন। তার পরে যান।
এ বার শুরু হল তরুণের দেহ তল্লাশি। এ পকেট, সে পকেট, আবার এ পকেট। না, মাস্ক পাওয়া গেল না। শেষে তরুণ বললেন, ‘‘স্যর, ভুল হয়ে গিয়েছে। এ বার থেকে মাস্ক পরে বেরোব।’’ তাতে অবশ্য কাজ হল না। মাস্ক না-পরায় তাঁকে গ্রেফতার করল দমদম থানার পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে, দক্ষিণ দমদমের নাগেরবাজার মোড়ের ঘটনা।
শুধু ওই তরুণই নন। মাস্ক না-পরার জন্য এ দিন নাগেরবাজার মোড় থেকে সাত জনকে গ্রেফতার করা হল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সাত জনের কাছে মাস্ক ছিল না। যাঁদের কাছে ছিল কিন্তু পরেননি, তাঁদের মাস্ক পরিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানিয়েছেন, সব এলাকাতেই এই অভিযান
নিয়মিত চলবে। মাস্ক না-থাকলে রেয়াত করা হবে না। পুলিশের এই অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পথচলতি মানুষজন। তাঁদের মতে, পুলিশ কঠোর হলেই নিয়ম ফিরবে।
আরও পড়ুন: আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়াল বিধাননগরে
গত কয়েক দিন ধরে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মাইকে ঘোষণা করেছে, মাস্ক না-পরে রাস্তায় বেরোলে এবং দূরত্ব-বিধি না মানলে গ্রেফতার করা হবে। তার পরেও একাংশের হুঁশ ফেরেনি বলে অভিযোগ। বাজার-হাটে ভিড়ে রাশ টানা যায়নি। এ দিনও ব্যারাকপুর, খড়দহ, সোদপুর, ঘোলা, পানিহাটি— সর্বত্র বেলা
১১টা পর্যন্ত রাস্তায় ভিড় দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, কোনও বিধিনিষেধ রয়েছে। এমনকি, কন্টেনমেন্ট এলাকা লাগোয়া অঞ্চলেও কোনও সচেতনতা দেখা যায়নি।
বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশি ধরপাকড় শুরু হয়। এ দিন ব্যারাকপুর, পলতা, ইছাপুরেও পুলিশ অভিযান চালায়। ব্যারাকপুর এবং সোদপুরে অনেকেই মাস্ক ছাড়া বাজারে এসেছিলেন। বেলা বাড়তেই শুরু হয় ধরপাকড়। মাস্ক না-থাকায় যাঁদের এ দিন গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তাঁদের সকলেই প্রায় এক যুক্তি দিয়েছেন। বেশির ভাগই বলেছেন, তাড়াহুড়ো করে বেরিয়েছেন বলে মাস্ক পরতে ভুলে গিয়েছেন।
কেউ বলেছেন, পাশের পাড়ায় যাবেন বলে মাস্ক পরেননি। নাগেরবাজারে এক মাঝবয়সি পুলিশকে বলেন, ‘‘মাস্ক পরলে দম বন্ধ লাগে। তাই পকেটেই রাখি। ভিড় হলে পরি।’’ এক পুলিশ অফিসার তাঁকে বলেন, ‘‘কিন্তু মাস্ক না-পরে করোনা হলে সেই শ্বাসকষ্ট অনেক বেশি কষ্টদায়ক হবে।’’ তার পরে ওই ব্যক্তি মাস্ক পরে বাড়ি ফেরেন। তাঁকে আর কাজে যেতে দেয়নি পুলিশ।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘রোজ গড়ে ২০-৩০ জনকে মাস্ক না-পরার জন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে। আগামী দিনে পুলিশ আরও কঠোর হবে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের এ দিন থানা থেকে জামিন দেওয়া হয়। পরে আদালতে গিয়ে তাঁদের জরিমানা দিতে হবে।